• ঢাকা
  • রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২, ৩০ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

হাদির হত্যাকারীরা পালিয়েছে কি না, এখনো নিশ্চিত নয় পুলিশ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম
হাদির হত্যাকারীরা পালিয়েছে কি না, এখনো নিশ্চিত নয় পুলিশ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নিয়েছে কি না, সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম। মূল সন্দেহভাজনদের সঠিক অবস্থান শনাক্তে এখনো তদন্তকাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে এ বিষয়ে তথ্য জানাতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেছেন বিক্ষুব্ধরা।

এ অবস্থায় রবিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে সেখানে হাদির হত্যা মামলার তদন্তের ব্যাপারে সর্বশেষ তথ্য জানাবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

মামলার তদন্তকারী সংস্থার প্রধান হিসেবে ওই সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান মো. শফিকুল ইসলামেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান দাবি করেছেন, গত ৮ দিনে তারা মামলাটির বিষয়ে বেশ খানিকটা অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি বলেন, কারা ঘটনাটা ঘটাইছে এবং যে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ঘটনাটা ঘটানো হয়েছে, সেটা আমরা ইতিমধ্যেই উদ্ধার করেছি।

বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এখন আমরা অন্য আসামিদের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করছি।’

একইসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। হাদি হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ডজনখানেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রধান আসামির পরিবারের বেশ কয়েক সদস্যও রয়েছেন।

কিন্তু মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখের অবস্থানের বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেননি গোয়েন্দারা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হয়েছে, তারা দুজনই ভারতে পালিয়ে গেছেন।

ডিবিপ্রধান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরাও সেগুলো দেখেছি এবং তথ্যটি যাচাই-বাছাই করে দেখছি। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

এর আগে, গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, হাদির ওপর হামলাকারীদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য তারা ইমিগ্রেশন ডাটাবেজে পাননি।

এছাড়া পাসপোর্ট ইতিমধ্যেই ব্লক করে দেওয়ায় বৈধভাবে তাদের পক্ষ দেশ থেকে পালানো সম্ভব নয় বলেও জানানো হয়। কিন্তু সন্দেহভাজন হত্যাকারীরা অবৈধভাবে সীমানা পেরিয়ে ইতিমধ্যে অন্য দেশে চলে গেছে কি-না, সে ব্যাপারে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য নেই গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।

গ্রেপ্তার হয়েছেন কারা?

শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন র‍্যাব-পুলিশের সদস্যরা। তাদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা, মা, স্ত্রী এবং শ্যালকও রয়েছেন। এছাড়া মাসুদের এক বান্ধবীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

হাদিকে গুলি করার আগে মাসুদ একাধিকবার তার স্ত্রী, বান্ধবী ও শ্যালকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের তিনজনকে দুই দফায় ৯ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া হামলার আগে-পরে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগে আরো ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে ময়মনসিংহ হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পালানোর তথ্য পাওয়ায় সেখানকার মানব পাচারকারী চক্রের দুজন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যা। ‘তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তদন্ত এগিয়ে যাচ্ছে’ বলে জানিয়েছেনস ডিবিপ্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।

এর বাইরে, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের ‘ভুল নিবন্ধন’ নম্বরের সূত্র ধরে আরো এক ব্যক্তিকে আটক করা হলেছিল। কিন্তু তদন্তে হত্যার ঘটনার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র না পাওয়া যাওয়ায় তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।

গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হলেও ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শনিবার প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনীতিবিদ এবং বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে জানাজার শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

Link copied!