• ঢাকা
  • সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ৫ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মন্ত্র পড়ে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা!


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৩, ০৫:১৭ পিএম
মন্ত্র পড়ে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা!

বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। রোববার বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কিয়ুকফিউ শহরের উপকূলে আছড়ে পড়বে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিপথ পরিবর্তনের জন্য মিয়ানমারের জান্তা কর্মকর্তারা ‘ড্রাগনকে খাওয়ানোর’ পূজা-অর্চনা করেছেন।

শনিবার (১৩ মে) মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, জান্তাপন্থী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ইউ পাওয়ার থেইকদি, আয়ারওয়াদি অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী উ টিন মং উইন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কি খাইং এবং পামাওয়াদ্দি নৌঘাঁটির কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল টিন মাউং থানের এই পূজা-অর্চনায় যোগ দেন। আয়ারওয়াদি অঞ্চলের পাথেইন শহরতলির কেপ নেগ্রাইসে (মাওয়াতিনজুন) এটি অনুষ্ঠিত হয়।

যেদিক দিয়ে ঝড়টি বয়ে যাওয়ার কথা সেদিকে আঙ্গুল তাক করে সন্ন্যাসী এবং জান্তা কর্মকর্তারা ৩৭ বার মন্ত্র পাঠ করেন।

ইরাবতি বলেছে, তাদের অযৌক্তিক উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। কারণ গ্লোবাল ডিজাস্টার অ্যালার্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন সিস্টেম গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় মোখার জন্য লাল সতর্কতা জারি করেছে। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, রাখাইন রাজ্য, ম্যাগওয়ে এবং সাগাইং অঞ্চলের ২০ লাখের বেশি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।


শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন মিয়ানমারের হাজার হাজার মানুষ। উপকূলীয় বিভিন্ন শহর ও গ্রাম থেকে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছেন লোকজন। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইন এবং তার সংলগ্ন আয়ারওয়াদি অঞ্চলের বাসিন্দাদের আশ্রয় নেওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।

মেট্রো ও হাইড্রোলজি বিভাগের পরিচালক লা তুন বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ উপকূলীয় অঞ্চলে সম্ভাব্য জলোচ্ছ্বাস এবং ভূমিধস ও ঝড়ের বিষয়ে সতর্ক করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।

ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের মতে, ঘূর্ণিঝড় মোখা রোববার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে স্থলভাগে প্রতি ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়বে। এসব অঞ্চলে ৬ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

রাষ্ট্র পরিচালিত একটি সংবাদপত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি পরিস্থিতির মহড়া চালানো হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে অর্থাৎ যেখানে ঝড়টি আঘাত হানবে, সেখানে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ঝড়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে রাখাইন ও আয়রাবতীর বিভিন্ন গ্রাম ও শহর। শুক্রবার পর্যন্ত কেবল আয়রাবতী অঞ্চলের লাবুত্তা ও মায়াউংমায়া শহর থেকেই বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ইউএনওসিএইচএ ঘূর্ণিঝড় মোখায় মিয়ানমারের সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) প্রদেশে ২ লাখ ৩২ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস এবং জনসংখ্যার অনুপাতে প্রদেশটির উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা কম। যেসব আশ্রয়কেন্দ্র আছে, সেগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। আমরা বিশেষভাবে রাখাইনের লোকজন নিয়ে চিন্তিত।

২০০৮ সালে মে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস রাখাইন উপকূলে আছড়ে পড়েছিল। এতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ এবং কয়েক হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মিয়ানমারের ইতিহাসে এর আগে এই মাত্রার ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের রেকর্ড নেই।

Link copied!