• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বেলারুশে এবার বিরোধী নেতাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৩, ১২:৪৮ পিএম
বেলারুশে এবার বিরোধী নেতাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড

সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বেলারুশের নির্বাসিত বিরোধী নেতা সভিয়াতলানা সিখানোস্কায়াকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। সোমবার (৬ মার্চ) তার অনুপস্থিতিতেই এ রায় ঘোষণা করা হয়। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম অ্যাসোসিয়েট প্রেস ও আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাসব্যাপী ভিন্নমত দমনে বেলারুশিয়ান সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপ এটি। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত এক নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর তার পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। যদিও সে নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ এই মিত্র বিরোধীদের বিরুদ্ধে সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিক্ষোভকারীদের ওপর নৃশংস দমনপীড়ন চালিয়েছেন। প্রধান বিরোধীদের গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।

একই বছর আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বেলারুশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা সাবেক ইংরেজি শিক্ষক সভিয়াতলানা সিখানোস্কায়াকে। বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে লিথুনিয়া চলে যান তিনি। দেশটির সরকার তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ক্ষমতা দখলের অভিযোগে বিচারকাজ শুরু করে।

দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বেল্টা জানিয়েছে, মিনস্কের একটি আদালত সোমবার সিখানোস্কায়াকে ১৫ বছরের সাজা দিয়েছে। একই আদালত বেলারুশিয়ান বিরোধী কাউন্সিলের একজন বিশিষ্ট সদস্য পাভেল লাতুস্কোকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এছাড়া একই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে আরও তিনজন অ্যাক্টিভিস্টকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। ২০২০ সালে আগস্টে গণবিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরেই তারা সবাই বেলারুশ ছেড়ে চলে যান।

সভিয়াতলানা সিখানোস্কায়া এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, “১৫ বছরের জেল। বেলারুশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য সরকার আমার কাজকে এভাবেই পুরস্কৃত করেছে।”

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সভিয়াতলানা সিখানোস্কায়া বলেছেন, আদালত-নিযুক্ত তার আইনজীবী বিচার চলাকালীন একবারও তার সাথে যোগাযোগ করেননি এবং মামলার ফাইলগুলো পর্যালোচনা করার জন্য তিনি যে অনুরোধ করেছেন তাতেও সাড়া দেননি ওই আইনজীবী। শাসক গোষ্ঠী আমি এবং সমস্ত বেলারুশিয়ানদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে।

আদালতের রায়ে বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা প্রত্যাখ্যান করে সভিয়াতলানা বলেন, “আমি আমার নিজের সাজা নিয়ে ভাবছি না। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের কথা ভাবছি। যারা এখনও কারাগারে বন্দি এবং দণ্ডিত। তাদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমি থামবো না।”

সিখানোস্কায়ার সাজা নিয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বেলারুশের নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মীদের নিয়ে আমরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এটি তার আরেকটি উদাহরণ।”

এদিকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি, সিখানোস্কায়াকে প্রায় ১১ হাজার ডলার জরিমানা দেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত।

প্রসঙ্গত, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অর্থায়নের অভিযোগে গত ২ মার্চ বেলারুশের শীর্ষ মানবাধিকার আইনজীবী এবং ২০২২ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আলেস বিলিয়াতস্কিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রসিকিউটররা আদালতের কাছে বিলিয়াতস্কির ১২ বছরের সাজার আবেদন করেছিলেন।

এপি বলছে, প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সাল থেকে ক্ষমতায়। অর্থাৎ ৩০ বছর ধরে বেলারুশ শাসন করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের সময় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকেই বিরোধী দলগুলোকে দমন করার পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরও হস্তক্ষেপ করেন।

Link copied!