• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫

হাইপারসোমনিয়া, অতিরিক্ত ঘুমের রোগ


তানজিনা তাহমিনা
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২১, ০৪:০৪ পিএম
হাইপারসোমনিয়া, অতিরিক্ত ঘুমের রোগ

সারা দিন অত্যধিক ঘুম আসা বা ঘুমের পেছনে অত্যধিক সময় ব্যয় করাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় হাইপারসোমনিয়া। হাইপারসোমনিয়া হলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে জেগে থাকা কঠিন হয়। মানে কিছুক্ষণ পরপরই ঘুম আসবে। এটি একটি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ঘুমিয়ে যেতে পারে। যেমন কর্মক্ষেত্রে এসে ঘুমিয়ে যাওয়া বা গাড়ি চালানোর সময় নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে যাওয়া। 

কেন হয় হাইপারসোমনিয়া? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, হাইপারসোমনিয়া রোগীরা সাধারণত এই রোগটি বুঝে উঠতে পারেন না। সংগত কিছু কারণেই হাইপারসোমনিয়ায় তাদের ঘিরে ধরছে। এর মধ্যে রয়েছে—

  • স্লিপ ডিজঅর্ডার নারকোলেপসি বা সারা দিনে অতিমাত্রায় ঘুম হওয়ার কারণে এটি হতে পারে। এছাড়া স্লিপ এপনিয়া বা রাতে ঘুমের সময় শ্বাসক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলেও এই সমস্যা হয়।
  • স্লিপ ডিপ্রাইভেশন বা রাতে যথেষ্ট ঘুম না হলে হাইপারসোমনিয়ার সমস্যা হয়।
  • অতিরিক্ত ওজন থাকলে হাইপারসোমনিয়া সমস্যা হতে পারে।
  • মাদকাসক্ত বা অ্যালকোহলের ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে গেলেও এই সমস্যা হতে পারে।
  • মাথায় আঘাত বা স্নায়বিক দুর্বলতা থাকলে হাইপারসোমনিয়ার সমস্যা হয়।
  • প্রেসক্রিপশনভুক্ত কিছু ওষুধ যেমন ট্রানকুইলাইজারস বা অ্যান্টিহিস্টামিনস নিয়মিত খেলে এই সমস্যা হতে পারে। 
  • জিনগত সমস্যার কারণেও এই রোগ হয়। যেমন মা-বাবার হাইপারসোমনিয়া থাকলে এই রোগ হতে পারে।
  • অনেক সময় বিষণ্ণতা থেকেও অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

হাইপারসোমনিয়ায় ভুগছেন, এটি বোঝার উপায় কী? সব রোগের মতো এরও কিছু উপসর্গ থাকে। স্বাভাবিক চোখে উপসর্গগুলো সাধারণ মনে হলেও এগুলো হাইপারসোমনিয়ার লক্ষণ নির্দেশ করে।

সাধারণত বেশি ঘুমের রোগ থাকলে তারা জেগে থাকার প্রাণান্ত চেষ্টা করে। কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও বারবার ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম দীর্ঘ বা অসময়েই হয় বেশি। কথা বলতে গিয়ে, খাওয়ার সময় বা গাড়ি চালানোর সময় বা অন্য কোনো কাজের সময় তারা হুট করেই ঘুমিয়ে পড়তে পারে। এই রোগে আক্রান্তরা ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমালেও সকালে ঘুম থেকে উঠতে তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। সারা দিনে সুযোগ পেলে আবারও ঘুমোতে ইচ্ছে করে। এই অতিরিক্ত ঘুম দৈনন্দিন কাজ, সম্পর্ক ও সামাজিক জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর জন্য় কিছু বিষয়ে লক্ষ করুন—

  • মানসিক বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন উদ্বেগ বা বিষণ্ণতায় ভোগার কারণে যদি বারবার ঘুম আসে, তবে বুঝতে হবে আপনি হাইপারসোমনিয়ায় আক্রান্ত। 
  • যথেষ্ট ঘুমানোর পরেও যদি দেখেন ক্লান্ত লাগছে, গায়ে শক্তি পাচ্ছেন না বুঝবেন হাইপারসোমনিয়া হয়েছে।
  • যদি দেখেন সব সময় কেমন অস্থিরতা বোধ করছেন, কথায় কথায় আপনি উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন। ঘুম চোখে লেগে থাকার কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে বুঝে নেবেন হাইপারসোমনিয়া আক্রান্ত হয়েছেন।
  • এই রোগ থাকলে আপনার কথাবার্তা, চলাফেরা ধীরগতির হয়ে যাবে। চিন্তাভাবনাও মন্থর হয়ে যায়। আপনার কিছু মনে রাখতে সমস্যা হবে। স্মরণশক্তি কমে যাবে। কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে সমস্যা হবে।

সব রোগের যেমন প্রতিকার রয়েছে, হাইপারসোমনিয়া সমস্যা থেকেও রেহাইয়ের উপায় রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন—

  • জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস পাল্টে নিতে হবে। কোনোভাবেই রাত জাগবেন না। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারলে ঘুমের সময়টা অন্তত ঠিক থাকবে।
  • রাত জেগে কাজ করা বন্ধ করুন। প্রতি রাতে রুটিন মেনে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
  • অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন একেবারেই বর্জন করুন।
  • যে ওষুধ আপনাকে তন্দ্রালুভাব করে দেবে, সেগুলো খাবেন না। চিকিৎসককে বলবেন ওষুধ পাল্টে দিতে।
  • চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। যেভাবে চলতে বলবে তা মেনে চলুন।
Link copied!