• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২৬ সফর ১৪৪৬

শিশুর খিঁচুনি কী কারণে হয়, কখন হয়, লক্ষণ কী


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ১০:২৬ এএম
শিশুর খিঁচুনি কী কারণে হয়, কখন হয়, লক্ষণ কী
ছবি : সংগৃহীত

শিশুর অসুখবিসুখে মা-বাবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন। আর খিঁচুনির মতো মস্তিষ্কের কোনো সমস্যা, তাহলে দুশ্চিন্তা বেড়ে হয়ে যায় বহুগুণ।

সাধারণত মস্তিষ্কের নিউরনের ভেতরে প্রতিনিয়ত চলমান বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ যখন অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়, তখন  খিঁচুনি হয়ে থাকে। খিঁচুনি যে শুধু মস্তিষ্কের রোগেই হয়ে থাকে, তা নয়। শরীরে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া, লবণপানির তারতম্য, লিভার ও কিডনির জটিল সমস্যার কারণেও খিঁচুনি হয়ে থাকে। তবে সব খিঁচুনিই মৃগীরোগ নয়।

খিঁচুনি হলে সাধারণত শিশু শক্ত হয়ে পুরো শরীর ঝাঁকাতে থাকে, একদিকে চোখ উল্টে তাকিয়ে থাকতে পারে, অনেকে শক্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া খিঁচুনির আছে নানা রকমফের, যার অনেকগুলোকেই আমরা হয়তো খিঁচুনি হিসেবে শুরুতে ধরিও না, এর ফলে দেখা যায় চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়ে যায়, যার দরুণ শিশুর মস্তিষ্কে ক্ষতি হতে থাকে।


খিঁচুনির লক্ষণ

কোনো কোনো শিশুর খিঁচুনি হলে মনে হয়ে শুধু সাইকেলের প্যাডেল চালানোর মতো ঘোরাচ্ছে। আরেক ধরনের খিঁচুনি আছে, যা সাধারণত ১ থেকে ২৪ মাস বয়সী শিশুদের হতে দেখা যায়, যাতে হাত–পা শরীরের কাছে এনে শিশু ঝাঁকি দিতে থাকে। সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার পর অথবা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এমন ঝাঁকুনি বেশি দেখা যায়। এ ধরনের খিঁচুনি হলেও দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। অবহেলায় শিশুর বিকাশজনিত সমস্যা হতে পারে।

কখনো শিশু অল্প সময়ের জন্য অস্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। আবার হঠাৎ কেউ অল্প সময়ের জন্য অমনোযোগী হয়ে পড়ে। এমনও খিঁচুনি আছে, যা দেখলে মনে হয় শিশু বুঝি জামার বোতাম লাগানোর চেষ্টা করছে। অথবা বারবার চোখ পিট পিট করছে, শুধু আলোর দিকে তাকাচ্ছে। কেউ হয়তো নিজে বারবার পড়ে যাচ্ছে অথবা হাতে কিছু থাকলে সেটা পড়ে যাচ্ছে। এগুলোও একধরনের খিঁচুনি।

আরও একটা অদ্ভুত ধরনের খিঁচুনি আছে, যাতে আগে যে ঘটনা ঘটেইনি, শিশুর মনে হয় সে এই ঘটনা আগে দেখেছে। কোন খিঁচুনিতে শিশুকে শুধু ভয় পেতে দেখা যায়, কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক হাসে কিংবা কাঁদে। কিছু সময়ের জন্য অস্বাভাবিক স্বাদ–গন্ধ পাওয়াও হতে পারে কোনো খিঁচুনির লক্ষণ। কোনো খিঁচুনিতে চোখের সামনে দেখা যেতে পারে অস্বাভাবিক আলোর ঝলকানি। কেউ আবার শুনতে পারে অস্বাভাবিক শব্দ।

তবে এসব লক্ষণ দেখা দেওয়া মানেই যে খিঁচুনি, এমন নয়। এর সঙ্গে শিশুর আচরণের পরিবর্তন, বিকাশে বাধা, স্কুলের খারাপ ফলাফলও জড়িত থাকতে পারে।

আচরণগত সমস্যা

আবার মানসিক বেশ কিছু সমস্যা আছে, যার বহিঃপ্রকাশ খিঁচুনির মতো উপসর্গগুলো নিয়ে প্রকাশ পায়। অনেক সময় পিঠ বেঁকে যায় বা নিতম্বে অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি হয়, কিংবা রোগী হাত-পা প্রবলভাবে ছোড়াছুড়ি করে। প্রকৃত মৃগীরোগীর খিঁচুনি থেকে এ ধরনের লক্ষণ আলাদা করা বেশ কঠিন। এসব ক্ষেত্রে রোগীর ইতিহাস খুব সূক্ষ্মভাবে বিবেচনা করতে হয়। এ ধরনের খিঁচুনিকে ডাক্তারি ভাষায় সিউডোসিজার বলে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত রোগী পুরোপুরি অজ্ঞান হয় না কিন্তু চোখ বন্ধ করে রাখে, আবার চারপাশে কী ঘটছে, তা বুঝতে পারে। এই ঘটনা অন্যের উপস্থিতিতে হয়। প্রকৃত খিঁচুনির মতো এতে জিহ্বায় কামড় লেগে রক্তপাত হয় না, কামড় লাগলেও দেখা যায় জিহ্বার আগায় অল্প একটু লাগতে পারে।

তাই শুধু হাত–পা ঝাঁকানো মানেই যে খিঁচুনি আর অস্বাভাবিক আচরণ মানে মানসিক সমস্যা এমন নয়। কোন লক্ষণগুলো আসলে খিঁচুনি, তা বুঝতে হলে গভীরভাবে উপসর্গগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ঘটনার সময়ের ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

Link copied!