‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগানে ৯ দিনব্যাপী বিংশতিতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলছে। এ বছর উৎসবটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে। নানা দেশের নানা ঘরানার ছবির পসরা মেলে ধরেছে এবারের উৎসবে। তবে করোনার কারণে পরিপূর্ণ আমেজ পাওয়া যাচ্ছে না।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয়েছে ভারতের ‘দ্য সেভেনথ স্ট্রিং’।
'দ্য সেভেনথ স্ট্রিং’ চলচ্চিত্র দেখে উচ্ছ্বসিত দর্শক ইফতেখার আহমেদ বলেন, “ঢাকা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল মানে বাড়তি কিছু পাওয়া, যেখানে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির মিলন ঘটে। দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র উপভোগ করার সুযোগ থাকে। আজকের ছবিটা বেশ ভালো লেগেছে। কৈশোরে যৌন নিপীড়ন ও মানসিক নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে এ ছবিতে। মেয়েটির জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কাহিনি নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ চলচ্চিত্র। যা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় ও সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিবেদিতা সরকার ‘দ্য সেভেনথ স্ট্রিং’ চলচ্চিত্র সম্পর্কে বলেন, “চলচ্চিত্রে অভিনীত নিষ্ঠা চরিত্রটি আসলে আমাদেরই প্রতিনিধিত্ব করেছে। আমাদের না বলা অনেক কথা ও কুৎসিত কিছু অভিজ্ঞতা নিজেদের মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার পরিণাম ভয়াবহ হয় বেশির ভাগ সময়। আজকের চলচ্চিত্রটি নারী সমাজের জন্য একটি উদাহরণ ছিল।”
১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৭০টি দেশের ২২৫টি সিনেমা দেখানো হবে। এর মধ্যে এশিয়ান ফিল্ম কম্পিটিশনে ২১টি, রেট্রোস্পেকটিভে ৫টি, ট্রিবিউটে ২টি, বাংলাদেশ প্যানোরমাতে ৯টি, ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে ৬টি, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ডে ৪৭টি, উইমেন ফিল্মমেকারস সেকশনে ২৭টি, স্পিরিচুয়াল সেকশনে ২৯টি, চিলড্রেন ফিল্ম সেশনে ১৮টি, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম সেকশনে ৬১টি সিনেমা দেখানো হবে।
সিনেমা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বাধীন ও সৃজনশীল নির্মাতাদের ছবিকে প্রাধান্য দিয়েছে উৎসব কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছে, “চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে একটি জাতি তার ঐতিহ্যকে ধরে রাখে। আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের তরুণ সমাজের পরিচয় ঘটছে। এতে আমাদের সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ঘটছে। আমরা ইনডিপেনডেন্ট ও আর্টিস্টিক ফিল্মমেকারদের ছবিগুলো বাছাই করার চেষ্টা করেছি। তবে সব ছবি যে একই মানের হবে, এমনটি নয়। তবে আমরা বিশেষভাবে ইনডিপেনডেন্ট ও আর্টিস্টিক ছবিকেই গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
এ বছর নতুন একটি শাখা খোলা হয়েছে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল নামে। মূলত মেধাবী নির্মাতাদের ছবি দেখাতে করা হয়েছে এই বিভাগ। এই শাখায় দেখানো হবে জার্মানিপ্রবাসী বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকার শাহীন দিল-রিয়াজের ছয়টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র।
উৎসবটি শুধু ছবি প্রদর্শনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উদীয়মান চলচ্চিত্রকারদের সহযোগিতা করতে তৈরি করা হয়েছে ওয়েস্ট মিটস ইস্ট স্ক্রিনপ্লে ল্যাব। এবার ১১টি প্রকল্প স্থান পেয়েছে। সেখান থেকে তিনটি প্রকল্পকে পুরস্কার দেওয়া হবে। আর ১১ জনকে নিয়ে হবে চার দিনের কর্মশালা।
এবারও জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চ, জাতীয় চিত্রশালা ও জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ছবি দেখা যাচ্ছে। শুধু জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তন ও শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ছবি দেখতে ৫০ টাকার টিকিট কাটতে হবে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিনা মূল্যে ছবি দেখতে পারবেন।