বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরেছেন অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন। চলচ্চিত্র উৎসবের আ সাঁর্তেঁ রিগা বিভাগের প্রতিযোগিতায় মনোনয়নপ্রাপ্ত বাংলাদেশি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।
দেশে ফিরলেও এখনও বাঁধনের চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে কানের স্মৃতি। এখনও ভুলতে পারছেন না ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর প্রিমিয়ারের সেই আনন্দের কান্না। সেদিন কেঁদেছিলেন কেন—জানতে চাইলে বাঁধন বলেন, “যেসব মানুষ ভাষা জানেন না, তারা রেহানার বেদনার সঙ্গে মিশে গেলেন। এক হাজার আসনের হলে সেদিন ছিল প্রায় ৯৫০ জন। আমরা তো আগে থেকে জানতাম না, সব দর্শক দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা দেবেন আমাদের। আমার জীবনের যাত্রাটা খুব পেইনফুল, রেহানার দৃশ্য দেখে ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলাম। অন্য দর্শকদের কান্নার শব্দও শুনতে পাচ্ছিলাম। আমার আনন্দ-বেদনা-সুখের দৃশ্য দেখে সবাই যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন, তা অভাবিত।”
এদিকে ভারতীয় ওয়েব সিরিজ ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’র ট্রেলার প্রকাশ পেয়েছে। ১৩ আগস্ট মুক্তি পাবে। সবমিলিয়ে আপনার সময়টা ভালো যাচ্ছে বলা যায়? উত্তরে বাঁধন বলেন, “সেটা বলতে পারব না। আমি শুধু ভালো চরিত্রে কাজ করে যেতে চাই। এই ওয়েব সিরজটির চরিত্রটি আমার খুব পছন্দের। আমি চেষ্টা করেছি ভালো অভিনয় করতে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই পরিচালক সৃজিত মুখার্জীর প্রতি। তিনি চরিত্রটিতে আমাকে না ভাবলে এত ভালো একটি সিরিজে কাজ করা হতো না। টিজার, ট্রেলার দেখে তো সবাই প্রশংসা করছেন।”
আপনার বিয়ে বিচ্ছেদ, সন্তানের অধিকার নিয়ে মামলা—এসব নিয়ে সবখানে বেশ চর্চা হয়েছে। এখনো কী সেসব সমালোচনা আপনাকে ব্যথিত করে? বাঁধনের স্বাভাবিক উত্তর, “সমালোচনা মানুষ করবেই। এটা থামানো যাবে না। তবে সেই সমালোচনা গঠনমূলক হওয়া চাই। কিছু ভুল তো মানুষের জীবনে থাকে। যেমন আমি আমার বয়সের থেকে বাইশ বছরের বড় বয়স্ক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছি। এটা আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিল। সেই ভুলের খেসারত আমি দিয়েছি। মানুষ এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা করেছে। আমি মানছি ওই সময় সমালোচনাটা ঠিক ছিল।
আমার দুঃখ অন্য জায়গায়। ডিভোর্সের পর আমি নানান রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি। সবাই বলেছে, বাঁধন কোটিপতি বয়স্ক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছে। এটা করেছে, ওটা করেছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সনেটকে (বাঁধনের প্রাক্তন স্বামী) কেউ প্রশ্ন করেনি, আপনি কেনো আপনার মেয়ের বয়সি মেয়েকে বিয়ে করলেন? কেন আপনি সংসার টেকাতে পারলেন না? কেন আবার বিয়ে করলেন?
এই বিষয়টা আমার কাছে অন্যায় মনে হয়। আমাদের সমাজটা পুরুষতান্ত্রিক। এখানে পুরুষদের জবাবদিহি করতে হয় না। শুধু ছেলেরা নয়, নারীরাও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা লালন করে। একজন মেয়ে অন্য মেয়েকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তারা বলে, ওই মেয়েটি সংসার বাঁচাতে পারেনি। কই আমি তো পেরেছি। এই ধরনের কথাবার্তা সত্যিই হতাশাজনক।
আমার সংসার ভেঙেছে বলে এই নয় যে আমি ব্যর্থ। আমি প্রত্যক্ষ করেছি, অনেকে আমার সফলতাকে জোর করে ম্লান করে দিচ্ছে কেবলমাত্র সংসার না টেকার কারণে। এটা ঠিক না।
মানুষ আমাকে নিয়ে সমালোচনা করলে আমি প্রতিউত্তরে কিছু বলতে চাই না। কারণ আমার জায়গায় না গেলে কেউ জানবে না, কেনো আমার সংসার ভেঙেছে! আমি ইততিবাচক মানুষ। সবকিছু সহজভাবে ভাবি।”
এখন আপনি সিঙ্গেল মাদার। কোনো সমস্যায় সম্মুখিন হচ্ছেন কি-না জানতে চাইলে বাঁধন বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে আমি ভীষণ ভিতু ছিলাম। ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলতে পারতাম না। আমার মনে হতো, সমাজ আমাকে রিজেক্ট করবে। মানে, আমাকে আমার বাচ্চাকে বৈষম্যের শিকার হতে হবে। হেনস্তার সম্মুখীন হব। এমনকি এটাও মনে হতো, আমার মেয়ের বিয়ে হবে না। এসব চিন্তায় খুব বেশি আতঙ্কিত ছিলাম।
তারপর আমার সমাজ যখন বিষয়টি জানলো তখন আমার চিন্তার ঠিক বিপরীত দিকগুলো ঘটলো। সমাজ আমাকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছে। সকলের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। বিশেষ করে আমার মেয়ে সায়রার স্কুল থেকে সিঙ্গেল মাদার হিসেবে অনেক সাহায্য পেয়েছি। সায়রার বন্ধুদের পিতা মাতারাও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। প্রত্যেকে আমাকে এগিয়ে চলার পথে অনুপ্রাণিত করেছেন।
এছাড়া আমার সহকর্মীরাও আমাকে অনেক সাহস জুগিয়েছেন। অনেকে বলেন, মিডিয়া জগতে নাকি প্রকৃত বন্ধু পাওয়া যায় না। এটা সত্য কিনা জানিনা! আমার পাশে এসে অনেক সহকর্মীরা দাঁড়িয়েছেন।”