রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অপতৎপরতা বন্ধ করে জাতীয় স্বার্থে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল শিক্ষক ফোরাম’ এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)’ এর শাবিপ্রবি শাখার নেতৃবৃন্দরা।
রবিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এ দুই সংগঠনের নেতৃত্বাধীন চারজন শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে এ বিষয়টি জানানো হয়।
বিবৃতিতে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সরকার পতনের এক দফা দাবীতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় এবং শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। পূর্বপরিকল্পিত পন্থায় হামলা করে সেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশটি পন্ড করা হয়েছে এবং তাতে বিএনপির অগণিত নেতা-কর্মী, সমর্থক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ হতাহত ও আটক হয়েছে বলে দেশে ও বিদেশে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়ে এখনও চলমান রয়েছে। সেই দিন থেকেই ব্যাপকহারে শুরু হয়েছে পুলিশী অভিযানের নামে বাসা-বাড়িতে রাত-বিরাতে হামলা, পরিবার পরিজনের সামনেই সংশ্লিষ্টদেরকে মারধর করা, তালিকাভুক্ত লোকদেরকে না পেরে নিকটাত্মীয়দের হেনস্থা করা এবং জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে যাওয়া। এহেন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে আজ কেউ ঘরে ঘুমাতে পারছে না। দেশের এই ভয়াল দুদর্শার জন্য সরকার এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন দেশে এমনকি জাতিসংঘে চরমভাবে সমালোচিত ও দায়ী হচ্ছে।
শিক্ষকবৃন্দ বলেন, আজ সর্বমহলে সরকারের অপরাজনীতির তীব্র নিন্দার পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ হতে আটককৃতদেরকে নানা ধরণের ভয় প্রলোভন দেখিয়ে দল ভাঙার চেষ্টা চলছে বলে অবিরত জোড়ালো অভিযোগ উঠছে। আজ শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, এমন পরিকল্পিত অপতৎপরতা দেশ জুড়েই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে গ্রাম, শহর সব জায়গায় একটা ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
এসময় শিক্ষকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিরোধীদলের প্রতিটি কর্মসূচিতে প্রায়শই দেখা যায় পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোষাকে একদল যুবক অস্ত্র হাতে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর হামলায় অংশ নেয়। এতে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ভীষণ আতংক ছড়িয়ে পড়েছে, পুরো জাতি আজ ভীতসন্ত্রস্ত। সাদাপোষাকধারী এই মানুষগুলো কারা? সেটি তদন্ত করে বের করে তাদের পরিচয় জনসম্মুখে প্রকাশ না করা পর্যন্ত দেশী ও বিদেশীদের কাছে আমাদের পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব পালন প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকবে।
আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত সকল বাহিনী নিজস্ব স্বকীয়তায় পেশাদারিত্বের সহিত দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে শিক্ষকবৃন্দ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
শিক্ষকবৃন্দ আরও বলেন, দেশ এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী না করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে এবং দেশ ও জাতি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
সেজন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়াসহ তাকে ও আটককৃত নেতা, কর্মী, পেশাজীবী ও সাধারণ জনতাকে মুক্তি দিয়ে জাতীয় স্বার্থে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি শিক্ষকবৃন্দ জোর দাবি জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকরা হলেন, শাবিপ্রবির ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল শিক্ষক ফোরাম’ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম এবং ‘ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)’ শাবিপ্রবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম।