বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় কালের পরিবর্তনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। সেই সঙ্গে খেজুরের রস ও রস দিয়ে তৈরি শীতকালীন পিঠাপুলিও অনেকটা বিলুপ্তি পথে। বর্তমানে খেজুরের রস পেতে হলে অপেক্ষা করতে হয়। অন্য কোনো এলাকা থেকে বিক্রি করতে আসা খেজুর রস বিক্রেতাদের জন্য।
কয়েক বছর আগেও উপজেলার বিশালপুর, ভবানিপুর, সীমাবাড়ী, মির্জাপুর, কুসুম্বি এবং গাড়ীদহ এলাকায় প্রচুর খেজুর গাছ ছিল, যা থেকে এই উপজেলার মানুষের খেজুর রসের চাহিদা মেটাত। তখন শীতের শুরু থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করার জন্য খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যেত। বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমে যাওয়ায় এই ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তারপরও গাছিরা এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করেন। শীত এলেই খেজুর গাছ খুঁজে বেড়ান গাছিরা। গ্রামের অনেক বাড়িতেই রাস্তার পাশে তাল ও খেজুরের গাছ ছিল। এরপর গাছ কেটে পুরো মৌসুমে খেজুরের রস সংগ্রহ করেন। খেজুর গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে হাট বাজারে বিক্রি করতেন চাষিরা।
শেরপুর উপজেলার তালপট্টি গ্রামের গাছি নজরুল বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে, তাতে এক সময় হয়তো আমাদের এলাকায় খেজুরের গাছ বিলীন হয়ে যাবে। বাড়তি জনসংখ্যার কারণে মানুষ এখন গাছ কেটে বসতবাড়ি তৈরি করছে।
শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ী, সাধুবাড়ী এলাকার এক গাছি জানান, খেজুরের রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা যেত। খেজুর গাছ ৫-৬ বছরের হলেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু করা যায়। কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত রস আহরণ করা হয়। তবে যত শীত বেশি পড়ে গাছ থেকে তত বেশি রস পড়ে। কিন্তু এখন রস পাব কোথায়? গাছই তো নেই। আগে উঁচু ভিটে, রাস্তার ধারে সারিবদ্ধভাবে খেজুর গাছ দেখা যেত। এখন আর চোখে পড়ে না।
শেরপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মোসা. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, আগে পতিত জমি ছিল। সেখানে অবহেলা ও অযত্নে খেজুর গাছ জন্মাত। গ্রামীণ রাস্তার পাশেও সারিবদ্ধভাবে খেজুর গাছ দেখা যেত। সেসব গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করত। ওই খেজুর গাছ থেকে বাংলার নবান্ন উৎসবের জন্য গাছিরা রস আহরণ করত। মানুষের মধ্যে অসচেতনতার কারণে মানুষ গাছ কাটলেও গাছ আর লাগায় না। অন্তত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যে হালেও প্রতিটি সড়কের পাশে ও খালি জায়গায় খেজুর গাছ লাগানো উচিত।