মানিকগঞ্জের শিবালয়ের সাত ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গত ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের বিশাল ভরাডুবি হয়েছে। সাত ইউপির মধ্যে মাত্র দুটিতে জিতেছে নৌকা। তিন ইউপিতে জিতেছেন বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকি দুই ইউপিতে জিতেছেন নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী।
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, সঠিক ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। এ ছাড়া উপজেলা ও জেলার দুই নেতার স্বজনপ্রীতিতেও নৌকাডুবি হয়েছে।
শিবালয় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, উপজেলার উথলী ইউপিতে নৌকার প্রার্থী মো. আব্বাস আলী ৫ হাজার ৭৮৫ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী পান ৪ হাজার ৫৯৮ ভোট। শিমুলিয়া ইউপিতে নৌকা প্রার্থী জহির উদ্দিন মানিক ৭ হাজার ৯২৬ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রহমান পান ৫ হাজার ৩০৫ ভোট।
শিবালয় মডেল ইউপিতে বিএনপি ঘরানার সাবেক চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন আলাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৭ হাজার ২২৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহসীন রাজু পান ৪ হাজার ৭৭ ভোট। আর নৌকার প্রার্থী পান মাত্র ২ হাজার ৬৯৭ ভোট। তেওতা ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারফ হোসেন মোল্লা ৪ হাজার ৪৬২ ভোট পেয়ে নৌকার প্রার্থী আবুল বাসার সুমনকে ১৮৪ ভোটে পরাজিত করে।
আরুয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খান মাসুমকে ৫৯২ ভোটে হারান একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মোনায়েম মুন্তাকিম রহমান খান অনিক। উলাইল ইউপিতে বিশাল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকার প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি ঘরানার সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস।
মহাদেবপুর ইউনিয়নে বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে মো. শাহজাহান মিয়া ৪ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান, জামায়াত সমর্থিত মাহমুদুল আমীন ডিউককে পরাজিত করছেন। এ ইউপিতে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মহিদুজ্জামান তড়িৎ পান ৩ হাজার ৪১৮ ভোট।
উপজেলা পাঁচ ইউপিতে নৌকা প্রতীকের ভরাডুবি বিষয়ে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, জেলা নেতাদের সুপারিশে ও মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে ব্যর্থতায় এমন পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।
তেওতা ইউপিতে নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী আবুল বাসার সুমন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “ব্যক্তি ইমেজে আমাকে সাধারণ মানুষ কাছে টেনে নিলেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে মাত্র ১৮৪ ভোটে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। এ পরাজয় আমার নয়, খোদ দলের কিছু চিহ্নিত নেতা-কর্মীই দলকে ডুবিয়েছে। আগামী কাউন্সিলে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ কুদ্দুস বলেন, “দলের কিছু প্রভাবশালী চিহ্নিতরা নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ায় প্রার্থীরা হেরেছেন। যার মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহিম খান তার আপন ভাগনে, বিএনপি নেতা আলালের পক্ষ নিয়েছেন।”
শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান খান জানু তার আপন ভাতিজা মুন্তাকিম রহমান খানকে বিজয়ী করতে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন। নির্বাচনের পর তারা বিএনপি ঘরানার বিজয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে রেজাউর রহমান খান জানু বলেন, “আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আমার কাছে সদ্য নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানরা আসতেই পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে মাত্র।”