পেটের তাগিদে প্রতিদিনই ভিক্ষার জন্য রাস্তায় বের হতে হয় ভিক্ষুকদের। সারা বছর তারা ভালো খাবার বা আনন্দ উপভোগ করার পরিবেশ পান না। সমাজের এই অবহেলিত মানুষগুলোর জন্য এবার মমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমরা ‘ক’ জন নামে শেরপুরের একটি সংগঠন। শুধু তাই নয়, রঙিন কার্ড ছাপিয়ে ভিক্ষুকদের জন্য ভিক্ষা বিলাস নামে বনভোজনের আয়োজন করেছে ওই সংগঠনটি। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়েছে সমাজের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) আয়োজন করা হয় ভিক্ষা বিলাস নামের পিকনিক অনুষ্ঠানের। এ জন্য স্থানীয় গোল্ডেন ভ্যালী পার্কে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী ভিক্ষুকরা নিজ পেশার কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে মেতে ওঠেন আনন্দ উল্লাসে। তারা উপভোগ করেন পোলাও, মাংস ও ডিমসহ নানা স্বাদের খাবার। এরপর পিকনিকে আগত ভিক্ষুকরা অংশ নেন গ্রাম্য নানা খেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।
ভিক্ষুক লাল বানু বলেন, “পিকনিকে আইসা আমরা অনেক খুশি হইছি। এর আগে আমগরে লইয়া কেউ এই রকম আয়োজন করে নাই।”
আরেক ভিক্ষুক নয়ন মিয়া বলেন, “পার্কে আইহা (এসে) আমাগো অনেক ভালো লাগছে। এহানকার পরিবেশ খুব সুন্দর। ভাইয়েরা আমাগো এহানে নিয়া আইছে আমরা সবাই মিইলা (মিলে) ঘোরা ফেরা করছি, খাওয়া দাওয়া করছি।”
ভিক্ষুক শরীফা বেগম, আতাহার আলী ও নাজমুল শেখ বলেন, “এই পার্কে আইসা আমরা আত্মহারা হয়ে গেছি। আমাদের জন্য এত আয়োজন করা হইছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।”
ভিক্ষুকদের জন্য প্রতি বছর এ ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজনের দাবি জানিয়ে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমাজের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “যারা শুধু ভিক্ষা করে থাকে। তাদেরও মনে সাধ জাগে ভালো কিছু খাবার আর আনন্দ উপভোগ করতে। এমন আয়োজনে ভিক্ষুকদের খুশি দেখে ভালো লাগলো।”
আমরা ‘ক’ জন সংগঠনের সদস্য কায়সার মাহমুদ রাজু বলেন, “সমাজে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে ভিক্ষুকরা সবচেয়ে বেশী অবহেলিত। মনের মধ্যে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওই মানুষগুলো আনন্দ উল্লাস থেকে দূরে থাকে। তারা কখনও আনন্দের অংশীদার হতে পারেন না।”
কায়সার মাহমুদ রাজু আরও বলেন, “শীতের সময় শ্রমিক থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ পিকনিকের আয়োজন করেন। কিন্তু ভিক্ষুক শ্রেণির মানুষের মনেও এ রকম ইচ্ছা থাকলেও তারা তা করতে পারেন না। আমি একজন লেখক। আমার সেই সৃজনশীল চিন্তা ধারা থেকে ভিক্ষুকদের জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে।”
সংগঠনের আরেক সদস্য রিজভী আহমেদ বলেন, “পিকনিক উপলক্ষে ভিক্ষুকদের জন্য আমরা আলাদা কার্ড ছাপিয়েছি। আমন্ত্রিত প্রত্যেক ভিক্ষুকদের মাঝে ওইসব কার্ড সরবরাহ করা হয়। সময় স্বল্পতার কারণে জেলার সকল ভিক্ষুককে আমন্ত্রণ জানাতে পারিনি। এবার প্রায় ৬০ জন ভিক্ষুক এ আয়োজনে সামিল হতে পেরেছেন।”