কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরায় একই গ্রামের চারজনকে ডাকযোগে রেজিস্ট্রিকৃত চিঠি পাঠিয়ে ৩ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের দুজন চৌদ্দগ্রাম থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা।
ভুক্তভোগীদের একজন ডা. আবদুল মমিন পাটোয়ারি থানার সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, তার ছেলে মো. হারিছ আহম্মেদ পাটোয়ারি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পদুয়া পোস্ট অফিসের একজন পোস্টম্যান রেজিস্ট্রিকৃত একটি চিঠি তার হাতে দেন। এতে প্রেরকের নাম উল্লেখ করা হয়- ‘মো. আওয়াল, ১০৭, এসএসকে রোড ফেনী’। খামের ভেতর তিনি হাতের লেখা একটি চিঠি পান। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘ডা. মমিন, তুমি তোমার ছেলে হারিছকে যদি বাঁচাতে চাও, তাহলে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পশ্চিম পাড়ার স্বপনের দোকানে ব্যাগে করে ৩ লাখ টাকা রেখে আসবে। নয়তো তোমার ছেলেকে এই তারিখের পর যেকোনো দিন গুলি করে মারা হবে। অথবা অপহরণ করে ২০ লাখ টাকা আদায় করা হবে।’ এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করলে আরও বিপদ হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ডা. মমিনুল ইসলাম পাটোয়ারি বলেন, “আশঙ্কা করছি-একটি চক্র আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করতে পারে। বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
অপর একজন ভুক্তভোগী রুবি আক্তার। তিনিও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, তার ছেলে আবদুল মমিন আল মেহেদী (১৮) বর্তমানে ফেনীর মহিপাল সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন। গত ২৩ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে উপজেলার পদুয়া পোস্ট অফিসের একজন পোস্টম্যান রেজিস্ট্রি করা একটি চিঠি তাঁকে পৌঁছে দেয়। চিঠির ওপরে প্রেরকের নাম উল্লেখ করা হয়—মহিম, ফেনী কমার্স কলেজ, ৩০৯ এস এস কে রোড, ফেনী।
রুবি তার জিডিতে আরও উল্লেখ করেন, খামটি পেয়ে তিনি খুলে ভেতরে হাতের লেখা একটি চিঠি পান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘রুবি তোমার একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে চাও? যদি চাও তাহলে ৩ লাখ টাকা ভুট্টুর ঘরের পূর্ব পাশের জানালার সানশেডের ওপর রেখে দিও, ২৯ জানুয়ারির মধ্যে। যদি কোনো ধরনের পুলিশ, বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়, তাহলে তোমার ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে আগুন দেওয়া হবে। চিঠির নিচে লেখা রয়েছে, ইতি কিশোর গ্যাং ফেনী।’
ভুক্তভোগী রুবি আক্তার বলেন, “আমি এবং আমার ছেলে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আছি। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।”
এছাড়াও একই গ্রামের প্রবাসী সাহাব উদ্দিন ও স্বাধীন নামের দুই ব্যক্তির কাছে একইভাবে চক্রটি চাঁদা দাবি করেছে বলে জানা গেছে।
জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন বলেন, “ভুক্তভোগীদের দুজন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। স্থানীয় ও পারিপার্শ্বিক বিরোধ এবং কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে গুরুত্বসহকারে জিডিগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।”
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, “রুবি আক্তার এবং ডা. মমিনুল ইসলাম পাটোয়ারির দায়েরকৃত দুটি সাধারণ ডায়েরি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। চিঠিগুলো ফেনীর একটি পোস্ট অফিস থেকে পাঠানো হয় বলে খামে উল্লেখ করা হয়েছে।”