শীতের ভোরে ঘুম থেকে না ওঠায় আকাশ (২১) নামের এক হেলপারকে হত্যা করেন ট্রাকচালক টিপু। সেই লাশ গাড়িতে রেখেই মালামাল আনলোড করিয়ে কুমিল্লা যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে লাশ ফেলে যান।
প্রায় ক্লু-লেস এই হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১৬ দিনের মাথায় গ্রেপ্তার করা হয় ঘাতক ট্রাকচালক আরিফুর রহমান টিপুকে (৩০)। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছেন টিপু।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের মিডিয়া উইং হাফিজুর রহমান বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাফিজুর রহমান জানান, আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার আগে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে টিপু স্বীকার করেন, তিনি নিজেই খুন করেছেন ভিকটিম আকাশকে। আসামির দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত ট্রাক জব্দ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, শুরুতে পুরো ঘটনাটি ক্লু-লেস থাকলেও ভিকটিমের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে মূলত উদঘাটন হয়েছে হত্যাকাণ্ডের কারণ। ১৬ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বন্দর উপজেলার জাঙ্গাল এলাকা থেকে আকাশের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আকাশ কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার সুজানগর এলাকার মোতালেব মিয়ার ছেলে। পেশায় একজন খণ্ডকালীন ট্রাক হেলপার।
হত্যাকাণ্ডের পর আকাশের বাবার দায়ের করা মামলার তদন্তকারী অফিসার কখনো চালক, কখনো হেলপার বা ব্যবসায়ী পরিচয়ে ছদ্মবেশে খুঁজতে থাকেন সেই চালককে। চালকের নাম পাওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পাওয়া যায় তার ঠিকানা। চাল ব্যবসায়ী সেজে কাঙ্ক্ষিত সেই চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সময় অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি চলে আসেন ট্রাকসহ চালক টিপু। এ সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে আদালত সূত্র জানায়, নিজের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে টিপু জানান, ১৩ জানুয়ারি রাতে তিনি ও ভিকটিম আকাশ গাঁজা সেবন করেন। তাদের ট্রাকে ছিল পুরোনো বই ও কাগজ, যা রাজধানীর মাতুয়াইলে পৌঁছে দিতে হবে। কুমিল্লা থেকে রওনা হয়ে শুক্রবার রাতে তারা শিমরাইল স্ট্যান্ডে পৌঁছান। সেখানে রাত্রিযাপন করে পরদিন ১৪ জানুয়ারি ভোরে আকাশকে ঘুম থেকে উঠে গাড়িতে থাকা মালামাল আনলোড করার নির্দেশ দেন টিপু।
কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে অস্বীকৃতি জানান আকাশ। এতে চালক টিপু তাকে গালিগালাজ করেন। প্রতি-উত্তরে আকাশও গালি দিলে টিপু তার গলা চেপে ধরেন। হত্যার পর ট্রাক নিয়ে মাতুয়াইলে পণ্য খালাস করে পুনরায় কুমিল্লার দিকে রওনা দেন টিপু। সেখানেই চলার পথে জুমার নামাজের আগে মহাসড়কে আকাশের লাশ ফেলে পালিয়ে যান।