• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

খরস্রোতা ঝাড়কাটা এখন আবাদি জমি


জামালপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২২, ০৮:৪০ এএম
খরস্রোতা ঝাড়কাটা এখন আবাদি জমি

অযত্ন-অবহেলায় অস্তিত্বই হারাতে বসেছে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার এক সময়কার খরস্রোতা নদী ঝাড়কাটা। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করায় বালু ও পলি জমে নাব্যতা হারিয়ে নদীটি পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। শুকিয়ে নদীটি রূপ নিয়েছে আবাদি জমিতে। সেই সঙ্গে অবৈধ দখলদার, অবৈধ স্থাপনা আর দূষণে বিপর্যস্ত এ নদী। 

মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ, কড়ইচড়া ও গুনারীতলা ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ঝাড়কাটা নদী দীর্ঘ দিন ড্রেজিং না করায় বালু ও পলি জমে নব্যতা হারিয়ে পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। এতে করে নদীটির কোথাও চলছে ফসল চাষ, কোথাও গো-চারণ, কোথাও শিশুদের খেলাধুলা, নয়তো বালু উত্তোলন আবার কোথাও পরিণত হয়েছে দিঘিতে।

জানা গেছে, ১৯৪৫ সালে নদীটি উৎপত্তি হয়েছিল। ইসলামপুর উপজেলার হারগিলা নামক স্থানে যমুনা নদীর পানির তীব্র স্রোতে ভাঙনের ফলে মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর হয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলার ঝাড়কাটা, মহিষবাথান, জটিয়ারপাড়া ও গুনারীতলা ইউনিয়নের গুনারিতলা হয়ে সরিষাবাড়ি উপজেলা দিয়ে যমুনার নদীর সাথে মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয় ঝাড়কাটা নদী। প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে এক সময় ছোট-বড় নৌকায় করে ধান, পাটসহ বিভিন্ন পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হত। নদীটিতে দেশী মাছে ছিল ভরপুর। নদীর পাড়ের মানুষ ও মাঝিরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

আরও জানা যায়, সেই সময় মাদারগঞ্জ উপজেলার সাথে ইউনিয়নগুলোর সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। রাস্তার অবস্থা এতই বেহাল ছিল যে পায়ে হেঁটেও চলাচল করা কষ্টসাধ্য ছিল। সেই সময় নৌকাই ছিল এক মাত্র বাহন। এ উপজেলার মানুষ ঝাড়কাটা নদী দিয়ে জেলা সদরসহ বিভিন্ন যাতায়াত করতেন। এখন নদীটি বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মাণের ফলে ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং বালু ও পলি জমার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ দিনেও ড্রেজিং না করায় খরস্রোতা ঝাড়কাটা নদী ভরাট হয়ে গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ঝাড়কাটা নদীর কোনো স্থানে বালু ও পলি মাটি জমে জেগেছে চর, আবার কোথাও পরিণত হয়েছে দিঘিতে। ঝাড়কাটা নদী এখন ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। পানি সংকটে নদীতে মাছ না থাকায় দুই তীরের বসবাসকারী জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। মাঝিরাও জীবিকার প্রয়োজনে ছেড়ে দিয়েছে বাপ-দাদার পেশা। নদীর পানি প্রবাহ না থাকায় তীরবর্তী মানুষেরা নদীর বুকে ফসল চাষ করছে। নদীর ওপর ভাগে ধানের বীজতলা ও নদীর তলায় ধান রোপণ করার দৃশ্য চোখে পড়ে। কোথাও মাসকালাই, মরিচ, গম, ভুট্টা, খেসারিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করছে। দেখে মনে হয় নদীর কোন অস্তিত্ব নেই। মাঝে মাঝে দেখা যায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট দিঘি। সেই নদীতে মাছ শিকার ও গবাদি পশু গোসলের দৃশ্যও চোখে পড়ে। ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। সেই সাথে বালু ও পলিমাটির স্তর পড়ে নদীটির অস্তিত্ব এখন বিলীনের পথে।

ইমরান মাহমুদ বলেন, নদীর ওপর বেশ কিছু সেতু হওয়ায় নব্যতা হারিয়ে এখন এটি মৃত প্রায়। জেগে ওঠা চরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ করা হচ্ছে। দখল করে চাষাবাদ করছে পাশের জমির লোকজন। নদীটি উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। বর্তমানে নদীটি দেখে মনে হয় না যে এক সময় এই নদীতে স্রোত ছিল। 

জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, ঝাড়কাটা নদী প্রশস্ত ও গভীরতা কমে প্রায় সমতল হয়েছে। বর্ষার মৌসুমে পলি ও বালুর স্তর পড়ে নদীটি ভরাট হয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়। জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ চলছে। নদীতে ড্রেজিং করার প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদী খননরে কার্যক্রম গ্রহণ করলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে।
 

Link copied!