পাবনায় শীত জেঁকে বসেছে। জুবুথুবু অবস্থায় নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। পৌষের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে মাঘের প্রথম সপ্তাহে যেন হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডা শুরু হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। গত চার দিন ধরে জেলাজুড়ে বইছে হিমেল হাওয়া। যার ফলে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ চরম বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন। শিশু-বয়স্করা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
শহরের অভিজাত বিপণী থেকে শুরু করে রাস্তায় হকার্সদের কাছে শীতবস্ত্র ক্রয় করতে ভিড় জমেছে। ভোরের আলোয় দেখা মেলে শীতের দৃশ্য। সন্ধ্যার পর থেকেই কনকনে শীত, শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন হতে থাকে প্রকৃতি। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিতান্তই মানুষগুলো ঘরমুখি হয়ে যায়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের পর্যবেক্ষণ নাজমুল হক জানান, রাজশাহী বিভাগ তথা উত্তরাঞ্চলের উপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকদিন শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ঈশ্বরদীতে আলোর দেখা পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে তিনি জানান, আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে যাবে এবং শীতের তীব্রতা বাড়বে। বুধবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বৃহস্পতিবার সকালে তা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা। শীতবস্ত্র ও খাবারের সংকটে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। জেলা জুড়ে এক সপ্তাহ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন তারা। শীতের তীব্রতা ও ঘন কুয়াশায় সকালে কৃষকরা পেঁয়াজ, রসুন ও বিভিন্ন সবজি খেতের জমিতে পরিচর্যা করতে যেতে পারছেন না। যার জন্য পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজি পরিচর্যার অভাবে জমিতে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় দিন পার করছেন তারা।
তাপমাত্রা দিন দিন কমতে থাকায় পাবনা শহরের ফুটপাতের মার্কেটগুলোতে বাড়ছে শীতবস্ত্রের বিক্রির পরিমাণ। শীত থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে পোশাক কিনছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। গরম কাপড় কেনা-বেচা হচ্ছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। পাবনা হকার্স মার্কেটগুলোতে ও সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন এলাকায় শীতবস্ত্রের বিক্রেতারা বেশি বসেছে। সারাদিনই দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকছে।
গরম কাপড় ব্যবসায়ী রঞ্জু মিয়া বলেন, “প্রতি বছরই আমি এখানে শীত মৌসুমে গরম কাপড়ের দোকান দিয়ে থাকি। গত বছরের চেয়ে এবার বিক্রি তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হচ্ছে। বর্তমানে ফুটপাতের কাপড়ে ক্রেতাতের চাহিদা বাড়ছে। কারণ অল্প টাকায় ভালো মানসম্মত গরম কাপড় পাওয়া যায়।”
সেলিম নাজির উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আজিজুর রহমান বলেছে, “তিন-চার দিন ধরে শহরজুড়ে শীত পড়ছে বেশি। বেশ ঠান্ডা, তবে প্রাইভেট পড়ার জন্য খুব ভোরে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে।”
পাবনা শহরের বড় বাজার, লাইব্রেরি বাজার, টার্মিনাল, গাছপাড়াসহ একাধিক স্থানে গিয়ে দেখা যায়, দিনমজুর লেবাররা বসে আছেন। তবে অন্যদিনের তুলনায় অনেক কম। তীব্র শীতে গৃহস্থরা লেবার নিচ্ছেন না বলে জানালেন দিনমজুর দিতে আসার শ্রমিকরা।
শীত ও কুয়াশার কারণে ভোগান্তি বেড়েছে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের। সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের উপার্জনেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কৃষকরা সকালে উঠে জমিতে যেতো বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে।
হঠাৎ করে আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তীব্র শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ মানুষের দৈনন্দিন কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। গরিব মানুষ কাজে যেতে পারছে না। দরিদ্র, অসহায়, প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টের সীমা নেই। তীব্র শীত শর্তেও পাবনায় সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ লক্ষ্যণীয় নয়।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পরিসংখ্যান বিভাগ বলছে শীতে শিশু-বৃদ্ধরা বেশি ভুগছে। তারা নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস, জ্বর, সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ১০দিনে অন্তত ৮ শতাধিক ঠান্ডাজনিত রোগী শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দুই ওয়ার্ড মিলে দুই শতাধিক রোগী ভর্তি আছে। মেডিসিন ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগীর চাপ লক্ষ করা গেছে।
এদিকে জেলা সদর ছাড়াও জেলার অন্য আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু, বয়স্কসহ নানা বয়সী মানুষ ভর্তি হচ্ছেন। আটটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত এক সপ্তাহে অন্তত ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন।
২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক কে এম আবু জাফর বলেন, “হাসপাতালে শয্যার তুলনায় শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা অত্যধিক। আর এ ধরণের অবস্থা শীত মওসুমে হয়ে থাকে। তবে এবার রোগীর সংখ্যা বেশি।”
জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, শীতের তীব্রতার সঙ্গে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সরকারিভাবে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।