প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে কোনো মানুষ ঠিকানাহীন থাকবে না। প্রতিটি এলাকায় ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের তথ্য পেলে নাম ঠিকানা দেবেন। তাদের জমিসহ ঘর দেওয়া হবে। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধিশীল দেশে রূপান্তরের কাজ চলছে। ২০৪১ সালে আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছাব ইনশাল্লাহ।”
কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকাল পৌনে চারটার তিনি সভাস্থলে এসে পৌঁছান। এরপর তিনি সরাসরি উদ্বোধন মঞ্চে যান। ওখানে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও চার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানবিক কারণে আমরা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে ছিলাম। তাদের যত দ্রুত সম্ভব স্বদেশের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।”
বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সোনালি সৈকত কক্সবাজার পর্যটনের জন্য সবচেয়ে উন্নত জায়গা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতাকে হত্যা করার পর এরশাদ সরকার এসেছে, খালেদা জিয়ার সরকার এসেছে, কেউ এই কক্সবাজারের মানুষের দিকে ফিরে তাকায় নাই। এখানে কোনো উন্নয়ন করে নাই। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই কক্সবাজারের উন্নয়ন হয়েছে। আমি আপনাদের এলাকায় ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি, চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। এবার বিজয়ের মাসের এ সব উপহার।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এই কক্সবাজারে, আপনারা জানেন যেখানে এক সময় লবণচাষীরা খুব কষ্ট পেত। আমরা বিরোধী দলে থাকতে সেই বদরখালীতে লবণচাষী এবং চিংড়িচাষী সম্মেলন করেছি। ক্ষমতায় আসার পর লবণচাষীদের সার্বিক উন্নতির জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। লবণচাষীরা যেন আরও আধুনিক পদ্ধতিকে লবণচাষ করতে পারে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। নিজের দেশের চাহিদা মিঠিয়ে বাইরে রপ্তানি করতে পারি সেই ব্যবস্থাও আমরা নেব।”
মহেশখারীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়াতে ইকোপার্ক নির্মাণ, টেকনাফ সাবরাংসহ কক্সবাজারে ছয়টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কথা উল্লেখ্য করে প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের জাতীয় নির্বাচনের জন্য নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেছেন।
২০০১ সালে এই বাংলাদেশে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “খালেদা-তারেক মানুষ হত্যা, অগ্নিসংযোগ, গুম ছাড়া কিছু করতে পারে না। অস্ত্র চোরাকারবারের মামলায় অভিযুক্ত তারেক জিয়া চক্র জঙ্গিবাদের মদদদাতা। তারা ধ্বংস ছাড়া কিছুই পারে না।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি বাবা, মা ও ভাই সকলকে হারিয়েছি। নতুন করে হারানোর কিছু নেই। হারানোর কষ্ট কি আমার চেয়ে কেউ ভালো বুঝবে না। আপনাদের মধ্যে বাবা, মায়ের স্নেহ ও ভাই-বোনের ভালোবাসা পাওয়ার আশা করি। আপনারা আমার পরিবার। আপনারা আমাকে আগলে রেখেছেন। আমার একমাত্র চাওয়া আমি যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকব দেশের মানুষের আহার সংস্থান করা আমার কাজ। টিসিবির মাধ্যমে সস্তায় চাল, ডাল, তেল ও চিনি পাওয়ার সু-ব্যবস্থা করেছি। দেশের একজন মানুষও অভুক্ত থাকবে না।”
প্রধানমন্ত্রী সবশেষে কক্সবাজারে চলমান উন্নয়ন বিবেচনা করে নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করিয়ে বলেন, “আবার আসিব ফিরে, এই সৈকতের তীরে।”
এ সময় পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে জনারণ্যে ঠাঁইহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়। মানুষে মানুষে ভরপুর জনসভাস্থলের আশপাশে বিজয় সরণীর হলিডে মোড় থেকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকায় মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসার পর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে নৌকা উপহার দেন। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য প্রদানের আগে পরিবেশন করা হয় কক্সবাজারের একটি জনপ্রিয় আঞ্চলিক গান।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, সিরাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মাহবুবুল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছির, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ড. হাসান মাহমুদ, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, আমিনুল হক আমিন, আশিকুর রহমান, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জাফর আলম এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপি, প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, মাহবুব মোর্শেদ, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, আলমগীর চৌধুরী, শহীদুল্লাহ শহীদ, সিরাজুল ইসলাম বাবলা, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, তারেক বিন ওসমান, শামশুল আলম মণ্ডল প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম, মাহবুবুর রহমান, এমএ মঞ্জুর ও মো. নজিবুল ইসলাম। বেলা ১২টার পরপর কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জনসভার আনুষ্ঠানিকতা। এর পর কক্সবাজারের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা একে একে বক্তব্য রাখেন। বেলা ১১টা থেকে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এর আগে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার পর পর প্রধানমন্ত্রী উখিয়া উপজেলার সমুদ্র তীরবর্তী ইনানীতে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের নৌবাহিনী ও উপকূলীয় সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ-২০২২ এর উদ্বোধন করেছেন।