• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

গড় কেটে মাটি বিক্রির মহোৎসব


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ০৪:৫৪ পিএম
গড় কেটে মাটি বিক্রির মহোৎসব

টাঙ্গাইলের তিনটি উপজেলার ২১টি স্পটে গড় কেটে লাল মাটি বিক্রির মহোৎসব চলছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় গড় কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে বর্ষাকালে ওই সব এলাকায় গড় ধসের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা গেছে, ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া, বারইপাড়া, টেগুড়িচালা, ঢেলুটিয়া, ঘোড়ামারা, লক্ষিন্দর ইউনিয়নের মনতলা, দুলালিয়া, আবেদালী, কাজলা, সানবান্ধা, গারোবাজার; কালিহাতী উপজেলার মরিচা এবং সখীপুর উপজেলার সাপিয়ার চালা, বাগেরবাড়ি, ইন্দারজানী, গড়বাড়ি, বহেড়াতৈল, আড়াংচালা, আমতৈল, আমগাছ চালা ও গিলাচালা নামক স্থান থেকে অবাধে লাল মাটির গড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। কতিপয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, বন বিভাগের বিট ও রেঞ্জ কর্মকর্তার জ্ঞাতসারে স্ব স্ব স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা রীতিমতো ভেকু বসিয়ে দিনরাত ট্রাক, মাহিন্দ্র ট্রাক ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে ওইসব মাটি স্থানীয় ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে।

ভূমি আইন উপেক্ষা করে বিভিন্ন এলাকায় দেদার চলছে লাল মাটির গড় কাটা। এ ক্ষেত্রে কেউ পুকুর খনন, আবার কেউবা বাড়িঘর তৈরি করার অজুহাত দেখাচ্ছে। মূলত গড় কাটার এই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। অন্যদিকে ইটভাটার চাহিদা মেটাতে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির উপরিভাগ। এই মাটি বহনকারী ট্রাক চলাচলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তা।

স্থানীয়রা জানান, দিনে মাটির ট্রাক কম আসা-যাওয়া করলেও রাত ৮টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত শতাধিক ট্রাক দিয়ে মাটি নেওয়া হয়। এসব স্থানে স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীদের মদদ দিচ্ছেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা।

কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী জানান, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, বন বিভাগের বিট ও রেঞ্জ কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমতি নিয়েই তারা গড়ের মাটি কাটছেন। তা ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও প্রতি মাসে টাকা দিয়ে সমর্থন নিতে হয়। দিন শেষে তাদের হাতে দিনমজুরির টাকাই থাকে। কোনো কাজ নাই, তাই তারা মাটির ব্যবসা করে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছেন।

মনতলা গ্রামের ভেকু সিন্ডিকেটের হোতা শামসুল হক চৌধুরী বলেন, “আমি তো একা না, আমার মতো অনেকেই লাল মাটি কাটছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে মাটি ব্যবসায়ীরা সপ্তাহের বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে মাটি কেটে বিক্রি করছেন।”

টাঙ্গাইল বন বিভাগের বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, তিনি এ রেঞ্জে নতুন এসেছেন। বন বিভাগের ভূমির পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে শুনেছেন। সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তাছাড়া ব্যক্তিমালিকাধীন জায়গা কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের বিষয়ে তাদের কিছু করণীয় নেই।

ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ঘাটাইলে কৃষিজমির পরিমাণ ২৭ হাজার ৮৫১ হেক্টর। এর মধ্যে তিন ফসলি জমি ১৭ হাজার ২১৮ হেক্টর, দুই ফসলি ৮ হাজার ১৮৫ হেক্টর ও এক ফসলি জমির পরিমাণ ২ হাজার ৩১১ হেক্টর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন জানান, তিনি গড় কাটা বা মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। এ ছাড়া সরেজমিনে পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

Link copied!