• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

হারিয়ে যাচ্ছে চাকমা ভাষার বর্ণমালা


রিকোর্স চাকমা, রাঙ্গামাটি
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৩, ০৩:৩৫ পিএম
হারিয়ে যাচ্ছে চাকমা ভাষার বর্ণমালা

সংরক্ষণ ও চর্চার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে চাকমা ভাষার বর্ণমালা। ফলে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে চাকমা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা। অন্যদিকে কয়েকটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠদানের মধ্যে দিয়ে ভাষাকে টিকিয়ে রাখার কাজ করছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে হারাতে বসেছে চাকমার ভাষার বর্ণমালা। ২০১৭ সাল হতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় বই বিতরণ করা হলেও এই ভাষার প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় এ উদ্যোগ কোনো কাজে আসছে না। ফলে চাকমা শিশুরা মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে।

প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষায় পড়ালেখার সুযোগ পাওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সংকট, শিক্ষা কার্যক্রম মূল্যায়নসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়েছে মাতৃভাষায় চালু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রতিবন্ধকতা ও উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় এগোচ্ছে না ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর এই মাতৃভাষা কার্যক্রম।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রাথমিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে জেলার ১০ উপজেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ২৯ হাজার ৮০৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাতৃভাষার ৬৭ হাজার ৭৫০টি বই দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ১৫ হাজার ৮২০টি, প্রথম শ্রেণিতে ২২ হাজার ৪১৬টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২২ হাজার ৬৩৫টি ও তৃতীয় শ্রেণিতে ছয় হাজার ৮৭৯টি বই দেওয়া হয়েছে। তবে সব বই জেলা কার্যালয়ে এলেও দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়ের এখনো পৌঁছানো যায়নি।

এসব দুর্গম বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের শিয়ালদাই লুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে ৮৪ জন ত্রিপুরা শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। এখন পর্যন্ত সে বিদ্যালয়ে ত্রিপুরা ভাষার কোনো পাঠ্যবই যায়নি বলে জানান এলাকার হেডম্যান জুইপুই ত্রিপুরা।

জুইপুই ত্রিপুরা বলেন, “ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের স্কুলে কোনো ত্রিপুরা ভাষার পাঠ্যবই আসেনি। এ ছাড়া এ ভাষায় পড়ানোর মতো শিক্ষকও নেই বিদ্যালয়ে।”

মাচালং মিলন পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ধনমুদ্রা চাকমা বলে, “আমরা চাকমা ভাষায় বই পেলেও শিক্ষক না থাকায় চাকমা ভাষায় একবর্ণ ও পড়তে পারি না। আমাদের পড়তে হচ্ছে বাংলা ভাষায়।”

রাঙ্গামাটি জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ার পর গত ৬ বছরে জেলা পরিষদ ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জেলার ১ হাজার ৫২ জন শিক্ষককে ১৪ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়। এরপর ২০২২ সালে ৫৭০ জন শিক্ষককে ৭ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

বনরুপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক অর্চনা তালুকদার বলেন, “এই ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে হলে বার বার শিক্ষকদের সংযত করার ট্রেনিং দিতে হবে। কয়েকজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ আরও বাড়াতে হবে। তাররে শিক্ষকরা তা আয়ত্ত করে রাখতে পারবে।”

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন ৭ বা ১৪ দিন প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয় বলে স্বীকার করে বলেন, “আগে যে সব শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তাদের আমরা আবার প্রশিক্ষণ দিলে আশা করা যাচ্ছে এক্ষেত্রে কিছুটা মূল্যায়ন হবে।”

চাকমা ভাষা গবেষক শম্ভুনাথ চাকমা বলেন, মাতৃভাষা পাঠদান শুরু হওয়ার ছয় বছর পরও কোনো সুফল দেখা যাচ্ছে না। সুষ্ঠু পর্যবেক্ষণ ও দক্ষ শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। জেলা পরিষদ ও শিক্ষা বিভাগ যদি আন্তরিক হয়, তাহলে কিছু সাফল্য আসতে পারে। তা না হলে ছয় বছর কেন, ১৫ বছরেও মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো সুফল আসবে না।

Link copied!