• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি সংস্কারের উদ্যোগ


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৩, ০৯:০৩ পিএম
পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি সংস্কারের উদ্যোগ

বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়ি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোববার (৫ নভেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান শহরের হেমসাগর লেনে অবস্থিত সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।

পাবনার জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্ব সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরিফ আহম্মেদ, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, এনডিসি আবুল হাছনাত, সহকারী কমিশনার মনিরুল ইসলাম, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ চন্দ্র মধু, পরিষদের নির্বাহী সদস্য মাজহারুল ইসলাম ও সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ।

সভায় সুচিত্রা সেনের বাড়িতে কিভাবে সংগ্রহশালা হিসেবে আরও সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সরকারের কাছে সংগ্রহশালা করার যে প্রস্তাব রয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য করণীয় নির্ধারণ করা হয়। বাড়িটিকে ঠিক রেখে বর্তমানে সংস্কারের জন্য এনডিসি আবুল হাসানাত এবং পরিষদের পক্ষ থেকে ড. নরেশ মধুকে সহযোগিতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, প্রতিদিনই দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী বাড়িটি দেখার জন্য আসেন। বাড়িটির প্রতি সংস্কৃতিপ্রেমীদের গভীর ভালোবাসা ও আবেগ রয়েছে। সুতরাং, বাড়িটিকে সুন্দর ও দর্শনীয় রাখার প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন।  

পরে জেলা প্রশাসক বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেন। এ সময় ড. নরেশ মধু সুচিত্রা সেনের মেয়ে মুনমুন সেনের সঙ্গে মোবাইলফোনে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় করার সংযোগ স্থাপন করে দেন। তারা পরস্পর মতবিনিময় করেন এবং জেলা প্রশাসক মুনমুন সেনকে পাবনায় তার পৈত্রিক বাড়ি দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক বলেন, “অনেক বছর ধরেই বাড়িটিতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা করার উদ্যোগ থমকে আছে। নবাগত জেলা প্রশাসক বাড়িটির বর্তমান অবস্থা দেখেছেন, মতবিনিমিয় করেছেন। আমরা কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি। আশা করবো এবার স্মৃতি সংগ্রহশালার কাজটা শুরু হবে।”

জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান বলেন, “বাড়িটি ঘিরে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। মূল বাড়ির আদল ঠিক রেখে সংস্কারের চেষ্টা করবো।”

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা শহরের হেমসাগর লেনের এই বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সুচিত্রা সেন। তার পৈত্রিক নিবাস ছিল বৃহত্তর পাবনা জেলার বেলকুচি উপজেলার ভাঙাবাড়ি গ্রামে। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। বাড়ির ছোটরা ডাকতেন রাঙা দি বলে। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন রমা।

পরিচালক সুকুমার দাশ গুপ্তের সহকারী নীতীশ রায় তার নাম বদলে রাখেন সুচিত্রা। কিন্তু পাবনার মহাকালী পাঠশালায় খাতায় কলমে তার নাম ছিল কৃষ্ণা দাশগুপ্ত।

পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিনী। শহরের মহাকালী পাঠশালায় পড়ালেখা শেষ করে সুচিত্রা সেন পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কয়েক মাস আগে সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাস গুপ্ত পাবনার সবকিছু ফেলে সপরিবারে ভারত চলে যান।

১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। অজ্ঞাত কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে নায়িকা হয়ে তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ মুক্তি পায়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সুচিত্রা সেন একটানা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। বাংলা ৫৬টি ও ৭টি হিন্দি মিলে মোট ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন এই মহানায়িকা। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রতিষ্ঠান ইমাম গাজ্জালি ট্রাস্ট ১৯৮৭ সাল থেকে বাড়িটিতে ইমাম গাজ্জালি ইনস্টিটিউট নামে শিশুদের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছিল। সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর ছয় মাসের মাথায় ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামায়াতের কবল থেকে উদ্ধার করা হয় সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি। কিন্তু উদ্ধারের পর বাড়িটিতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি আর্কাইভ করার কাজে নেই কোনো অগ্রগতি। ২০১৭ সালে সুচিত্রার কিছু ছবি দিয়ে নামমাত্র বাড়িটিতে শুরু করা হয় স্মৃতি সংগ্রহশালা।

Link copied!