• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
শিমের ফলন বিপর্যয়

গাছভর্তি ফুল থাকলেও হতাশ কৃষকরা


পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৩, ১১:৫২ এএম
গাছভর্তি ফুল থাকলেও হতাশ কৃষকরা

পঞ্চগড় সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকা হাঁড়িভাসা। এই ইউনিয়নটি শস্য ও শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য আদর্শ জায়গা হিসেবে পরিচিত। তবে এবার বড় লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছেন এই ইউনিয়নের অন্তত পাঁচ শতাধিক শিমচাষি।

শিম সাধারণত শীতকালীন সবজি হলেও এ উপজেলার কৃষকরা প্রায় কয়েক বছর ধরে আগাম শিমের চাষ করছেন। এতে তারা প্রতিবছরই লাভবান হচ্ছেন। তবে এবার ফলন বিপর্যয়ের কারণে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।

আশ্বিনের বর্ষণে গত দুই মাসে তাদের বাগানে তিনবার ফলন নষ্ট হয়েছে। এখন মরে যাচ্ছে গাছ। প্রতিকূল আবহাওয়া, রোগবালাই, আর পোকামাকড়ের আক্রমণে টেকানো যাচ্ছে না ফসল। গাছভর্তি ফুল থাকলেও কৃষকের মুখে হতাশার ছায়া। বাজারে ১২০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি হলেও স্বস্তি নেই তাদের মনে। চিন্তা এখন এত বড় লোকসান কীভাবে সামাল দেবেন ? আর কীভাবে ধারদেনা পরিশোধ করবেন ?

সরেজমিনে দেখা যায়, হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই কম-বেশি শিম চাষ হয়েছে। তবে এবার বাগানের চিত্র ভিন্ন। আগে বাগানে থোকা-থোকা শিম ঝুলে থাকতে দেখা গেলেও এবার কেবল ফুল দেখা যাচ্ছে। পাতাগুলো হলদে হয়ে গেছে। অনেক বাগানে ফুল ফুটে আবার মরে যাচ্ছে। রয়েছে পোকামাকড়ের আক্রমণ। ঝরে যাচ্ছে ফল। বাগান রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন কৃষকরা। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আষাঢ়ের শেষ দিকে তারা শিমের চারা রোপণ করেছেন।

কৃষকরা জানান, জমিতে পানি জমার ভয়ে অনেকেই মাটির ঢিবি তৈরি করে তাতে চারা রোপণ করছেন। পৌষ মাস পর্যন্ত বাগানে থাকে শিম। আগাম জাতের চল্লিশা শিমের চারা রোপণের দেড় মাস পরেই ফলন পাওয়া যায়। তবে এবার আশ্বিনের টানা বর্ষণে মারাত্মক ক্ষতি হয় শিম চাষে। গত দুই মাসে প্রতি বিঘা জমি থেকে ন্যূনতম লাখ টাকার শিম বিক্রির কথা থাকলেও অনেকেই এক কেজি শিমও বিক্রি করতে পারেননি। কেউ কেউ তুলেছেন মাত্র ৫ থেকে ১০ কেজি শিম। যেখানে আগে প্রতি সপ্তাহে এক বিঘা জমিতে শিম পাওয়া যেত ১৫ থেকে ২০ মণ। এবার বিবর্ণ বাগান টিকিয়ে রাখতে কীটনাশকসহ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন তারা।

শিম চাষি ফজলুল হক বলেন, “আমার পুরো বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। ধার-দেনা করে আগাম শিম চাষ করেছিলাম। এক কেজি শিমও তুলতে পারিনি।”

জাহিদুল ইসলাম বলেন, “বাজারে দাম দেখে অনেকেই মনে করে আমরা অনেক লাভ করছি। কিন্তু তারা হয়তো জানে না আমাদের বাগানের কী অবস্থা। আগের বছর এই সময়ে লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছি। এবার শিম পেয়েছি মাত্র ১০ থেকে ১৫ কেজি। যার বাজারমূল্য এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা মাত্র।”

জয়নাল আবেদিন নামের আরেক চাষি বলেন, “একদিকে বৃষ্টিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে, অন্যদিকে ভাইরাস ও পোকার আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। কৃষি কর্মকর্তাদের এখন পর্যন্ত দেখা পাইনি। তাদের কোনো পরামর্শ ও সহযোগিতা পাচ্ছি না। নিজেরা যেমন বুঝি দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে কিনে ওষুধ দিই। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।”

শিম ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে প্রতিদিন আমাদের এলাকা থেকে ১০ থেকে ১২ ট্রাক শিম দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো। এখন এক ভ্যানও শিম হয় না। সারাদিন বাগানে বাগানে ঘুরে মাত্র ৪৫ কেজি শিম কিনতে পারছি।”

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “এ বছর জেলায় ৮৯ হেক্টর জমিতে আগাম শিম চাষ হয়েছে। এবার বৃষ্টির কারণে শুরুতে যেসব জমিতে পানি জমেছিল সেসব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া শিমের ফুল ও ফল ধারণের জন্য যে আবহাওয়া দরকার সেটি আগে ছিল না। বর্তমানে তাপমাত্রা কমে আসছে। আশা করি এখন শিমের ফলন ভালো হবে। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের ডাকলে যাননি এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি।”

Link copied!