বই পড়ায় আগ্রহ বাড়াতে বিদ্যালয়ে নান্দনিক লাইব্রেরি স্থাপন


লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৬:০৪ পিএম
বই পড়ায় আগ্রহ বাড়াতে বিদ্যালয়ে নান্দনিক লাইব্রেরি স্থাপন

একসময় ছাত্র-ছাত্রীদের সময় কাটত বই পড়ে। কিন্তু এখনকার ছাত্র-ছাত্রীদের সময় কাটে মোবাইল দেখে। এতে বেড়েছে নানা অনৈতিক ও অসামাজিক কাজের সংখ্যা। সমাজে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ঘটছে নানান অপ্রীতিকর ঘটনা। যা কারোই কাম্য ছিলো না।

তাই শিক্ষার্থীদের বইয়ের প্রতি আগ্রহী ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবং মোবাইল বিমুখ রাখতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান।

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সদর উপজেলার পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অত্যাধুনিক মানসম্পন্ন ওডেন ফ্লোর লাইব্রেরি স্থাপন করেন তিনি। আধুনিক ও নান্দনিক ডেকোরেশন সমৃদ্ধ লাইব্রেরি পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরাও।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি স্থাপনের উদ্যোগ নেন ইউএনও আরিফুর রহমান। শুরুতে পাঁচটি বিদ্যালয়ে নান্দনিক এই লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়।

লাইব্রেরি স্থাপন করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ভবানীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, পালপাড়া ডিএম উচ্চ বিদ্যালয়, দালাল বাজার ফাতেমা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নুরুল্যাপুর আনজুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়।

লাইব্রেরিগুলোতে ইতোমধ্যে বই সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থান পেয়েছে রাজনীতি, সমাজনীতি, দর্শন, উপন্যাস, গল্প, কবিতা, এশিয়ান ইতিহাস, প্রখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী ও আত্ম-উন্নয়নমূলক বই।

লাইব্রেরি স্থাপন করা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বলেন, “বই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। কিন্তু বর্তমানে আমরা বেশি মোবাইলমুখী হওয়ায় বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এই লাইব্রেরি আমাদের বইমুখী করবে। লাইব্রেরিগুলো থেকে আমরা জ্ঞানের পরিধি আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে পারব।”

প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাবাসসুম, হাবিবা, রিপাত চৌধুরী ও সানি বলেন, “আগে মধ্যাহ্ন বিরতিতে ও অন্যান্য সময়ে মোবাইল দেখে বা গল্প করে আমাদের সময় কাটত। ইউএনও স্যার আমাদের বিদ্যালয়ে নান্দনিক লাইব্রেরি করে দিয়েছেন। তাই এখন বই পড়ে আমারা সময় কাটাব। এতে আমরা অসামাজিক কার্যকলাপ থেকেও মুক্ত থাকতে পারব।”

প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। প্রত্যেকটি স্কুলেই লাইব্রেরি প্রয়োজন রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইলের প্রতি যেভাবে আশক্ত হয়ে পড়ছে বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি থাকলে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। তাছাড়া লাইব্রেরি থাকলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধিও বাড়বে। লাইব্রেরি স্থাপনের এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।“

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, “বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা মোবাইলমুখী হয়ে পড়েছে। এর অন্যতম কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো মানের বইও নেই, লাইব্রেরিও নেই। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের ২১টি বড় প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি স্থাপন করব। তারই ধারাবাহিকতায় পাঁচটি বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি স্থাপন করেছি। ইতোমধ্যে লাইব্রেরিগুলোতে বইও সরবরাহ করা হয়েছে। আশা করি সেই বই পড়লে তাদের পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে এবং জ্ঞানের পরিধিও বাড়বে।“

বই প্রেমী এই ইউএনও আরও বলেন, “আমি দেখেছি এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরও আগ্রহ আছে। অচিরেই অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও লাইব্রেরি স্থাপন করা হবে। আমার লক্ষ্য একটাই, মোবাইল আসক্তি থেকে বের হয়ে সুনাগরিক হিসেবে যেন ছাত্রছাত্রীরা গড়ে ওঠে।”

Link copied!