• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বাইক না দেওয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা, কেনার পর দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু


রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম
বাইক না দেওয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা, কেনার পর দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুই বন্ধু নিহত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের শান্তিনগর সেতুর পাশে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের গোপীনাথদিয়া গ্রামের লাল মিয়া শেখের ছেলে রাজন শেখ (১৬) এবং একই উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের রব প্রামাণিকের ছেলে সোহাগ প্রামাণিক (১৬)।

রাজন আলীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সোহাগ শহরের শ্রীপুর বাজারে একটি গ্যারেজে কাজ করত। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সোহাগ তৃতীয়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজন মা–বাবার একমাত্র সন্তান। অনেক আগে থেকেই মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য সে বায়না ধরে। বয়স কম হওয়ায় স্বজনরা রাজি হননি। একপর্যায়ে ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর কয়েক দিন স্বাভাবিক ছিল। সপ্তাহখানেক আগে সে আবার আত্মহত্যার হুমকি দেয়। মা-বাবা বিষয়টি পাত্তা দেননি। গত শুক্রবার (৮ মার্চ) সকালে ঘরের দরজা আটকে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় রাজন। দরজা ভেঙে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই দিনই চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরে সে।

স্বজনরা জানান, হাসপাতাল থেকে ফেরার পর গত রোববার (১০ মার্চ) তাকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রাজন বন্ধু সোহাগকে নিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়। আলীপুর ইউনিয়নের শান্তিনগর সেতুর পাশে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে সড়কের পাশে ছিটকে পড়ে। গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

রাজনের চাচা আরিফ শেখ বলেন, “রাজনের বাবা ঢাকায় চীনের একটি প্রতিষ্ঠানে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করেন। সে মা-বাবার একমাত্র সন্তান। অনেক দিন ধরে মোটরসাইকেল কিনে দিতে মা-বাবাকে চাপ দিচ্ছিল। রাজি না হওয়ায় দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া হয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই মোটরসাইকেলে তার প্রাণ গেল।”

সোহাগের খালা রিনা খাতুন বলেন, “খুব সকালে রাজন বাড়িতে এসে সোহাগকে নিয়ে যায়। রোজার সময় বিকেলে ঘোরাঘুরি করা যাবে না, এ জন্য সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছে বলে সে জানায়। ঘুম থেকে উঠে এসে দুর্ঘটনায় দুজনের প্রাণ গেল।”

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কার সিদ্দিক বলেন, পরিবারকে জিম্মি করে মোটরসাইকেলটি কেনা হয়েছিল। সেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন মারা গেল। স্কুলগামী কিশোরদের মোটরসাইকেল কিনে না দিতে তারা সব সময় প্রচারণা চালান। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাসহ বিভিন্ন সভায় বিষয়টি নিয়ে বলা হয়। মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার আগে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।

সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন রেজা বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

Link copied!