• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জীবন বাঁচাতে হাসপাতাল থেকে ওসির দরজায় গর্ভবতী নারী


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩, ০৫:৫০ পিএম
জীবন বাঁচাতে হাসপাতাল থেকে ওসির দরজায় গর্ভবতী নারী

নিজের ও গর্ভের সন্তানের জীবন বাঁচাতে হাসপাতালের বিছানা থেকে পুলিশের কাছে ছুটে গেছেন আমেলা বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূ।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারি উপজেলা সদরের নিরাময় হাসপাতাল এন্ড ডায়গনেস্টিক সেন্টার থেকে পালিয়ে ওই গৃহবধূ পুলিশের কাছে ছুটে যান। 

আমেলা বেগম রৌমারি উপজেলার চর বাঘমারা এলাকার আমিনুল ইসলামের স্ত্রী।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১২ বছর আগে আমিনুল ও আমেলার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ফাতেমা (১১) ও কুলসুম (৯) নামের দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। এছাড়া এক পুত্র সন্তান মারা গেছে। এখন এই গৃহবধূ আবার গর্ভবতী। তবে ‘ভূমিষ্ঠ হতে যাওয়া সন্তান মেয়ে শিশু’ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়েছেন আমিনুল ও তার পরিবার। এই সন্তান জন্ম না দেওয়ার জন্য শুরু হয় নির্যাতন ও হত্যার হুমকি। সোমবার প্রসব বেদনা শুরু হলে ওই গৃহবধূ একাই হাসপাতালে যান। তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের (সিজার) প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় আমিনুল তার স্ত্রী ও গর্ভে থাকা সন্তানকে হত্যার হুমকি দেন।  হাসপাতালে ঝামেলা সৃষ্টি হলে নিজের ও সন্তানের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে সহযোগীতা চান আমেলা।

এ বিষয়ে রৌমারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপকুমার সরকার বলেন, “বিকেলের দিকে হঠাৎ এক নারী আমার কাছে এসে বলেন, বারবার মেয়ে সন্তান হওয়ায় তার স্বামী তাকে ও তার সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে ওই নারীর অভিযোগ শুনি। তখন জানতে পারি এই নারী স্বামী ও তার পরিবারের হাত থেকে বাঁচতে হাসপাতাল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা হেটে থানায় এসেছেন। বিষয়টি মর্মান্তিক হওয়ায় নারী পুলিশ সদস্যসহ ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং তার স্বামীকে থানায় আনা হয়। এরপর তাকে বিভিন্নভাবে বোঝানো হলে আমিনুল তার ভুল বুঝতে পারেন। এ ধরনের কাজ আর না করার প্রতিশ্রুতি দেন।

ভুক্তভোগীর স্বামী আমিনুল ইসলাম বলেন, “শুরুতে বিষয়টি আমি বুঝিনি। ওসি স্যার বোঝানোর পর এখন বুঝছি। মাইয়া বাচ্চা হইছে আমি খুশি। আমি আর আমার স্ত্রীরে কিছু বলব না।”

উপজেলা সদরের নিরাময় হাসপাতাল এন্ড ডায়গনেস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুর রহমান বলেন, “আজ সকালে ওই নারী একাই প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। এরপর তার স্বামীসহ কয়েকজন স্বজন আসেন। কিন্তু মেয়ে সন্তান হওয়ার কথা আগেই জেনে যাওয়ায় তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তখন আমরা তাদের পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধান করতে বলি। এরই মধ্যে সবার চোখ এড়িয়ে ওই নারী অসুস্থ অবস্থায় থানায় চলে যান। পরে পুলিশ এসে বিষয়টা সমাধান করে। রাতে বেসরকারি একটি ক্লিনিকে ওই নারী মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।”

Link copied!