বগুড়ার কাহালু উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির দেয়াল ও গেটে টাকা চেয়ে হুমকির পোস্টার টাঙানো হয়েছে। টাকা না দিলে বাড়ির ছেলেমেয়েদের ক্ষতি করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রোববার (১ অক্টোবর) সকালে বিষ্ণুপুর গ্রামের/৭০০ ঘরের দেয়ালেই ‘শ্যাডো’ বাহিনীর পোস্টার লাগানো দেখা যায়।
পোস্টারে লেখা, “আসসালামু আলাইকুম, সর্বনিম্ন ২০০ থেকে ৫০০০ টাকা ৬ তারিখের মধ্যে দিতে হবে। না হলে ৭ তারিখের থেকে আপনাদের ছেলে-মেয়ে হারায় গেলে আমার কোনো কিছু করার থাকবে না। আমি বা আমরা কে সেটা না খুঁজে আমি যা বলছি সেটা করার চেষ্টা করেন। তাহলে কিচ্ছু হবে না। অল্প কিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে ফেলাবেন না। যদি ছেলে মেয়েদের মঙ্গল চান তাহলে লোয়া পুকুরে সোলার লাইটের সাথে যে বক্স থাকবে নিজের টাকার সাথে নাম কাগজে লিখে ওই বক্সে ফেলান আর নিজের বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখুন। আমার এই কাগজ আপনি পড়ছেন, তাহলে মনে করেন আপনার ছেলে মেয়েকে তুলে আনতেও পারবো। দয়া করে টাকাটা দিয়েন। আমরা ছেলেগুলা ভালো না। ভালো থাকবেন ৬ তারিখ পর্যন্ত আল্লাহ হাফেজ।” এরপর ইংরেজিতে Shadow লেখা দেখা যায় পোস্টারে।
এদিকে, সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির দেয়ালে এমন পোস্টার লাগানো দেখে ভীত এবং আতঙ্কিত হয়েছে পড়েছেন গ্রামবাসী। অনেকে তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে একা পাঠাচ্ছেন না। আবার অনেকে ছেলেমেয়ে কাছে রেখে বাড়িতে বসে আছেন। এমনকি বাইরে খেলাধুলা করতেও যেতে দিচ্ছে না।
বিষ্ণুপুর গ্রামের মাঝাগাড়ি পাড়ার সোহেল ইবনে নূর বলেন, “সকালে সবার চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে দেখি আমাদের পাড়ার সবার বাড়ির দেয়ালে কে বা কাহারা টাকা চেয়ে পোস্টার লাগিয়ে গেছে। এ নিয়ে আমরা অনেক ভয়ে আছি। তবে যে কাজটি করেছে সে পরিচিত কেউ হতে পারে। কারণ সবার কাছে একই পরিমাণ টাকা চায়নি। সামর্থ্য বুঝে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। যা সন্দেহজনক।”
আশা খাতুন নামের এক গৃহবধূ বলেন, “আমার কাছে ২০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। আমার ছেলেকে আজ আমি স্কুলে যেতে দেইনি। কী একটা ভয়ের মধ্যে পড়ে গেলাম। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।”
আরিফুল ইসলাম আরিফ নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বাড়ির দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়েছে। আমার কাছে ৫০০০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে।”
মুরইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, “বিষ্ণুপুর গ্রামের প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ ঘরে একটি চক্র টাকা চেয়ে পোস্টার লাগিয়েছে। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।”
এ বিষয়ে কাহলু থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, “গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে এই পোস্টার লাগিয়েছে। কে বা কারা লাগিয়েছে এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। তদন্ত চলছে। অতি দ্রুত এই চক্রটি শনাক্ত করতে পারব।”
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, বিষ্ণুপুর গ্রামের ঘটনা অবগত হওয়া মাত্রই পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।