দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কুয়াশায় অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। মানুষের সঙ্গে গৃহপালিত পশুও কাঁপছে রাতের এই বরফ ঠান্ডায়। টানা চার দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল নয়টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
গত তিন দিনেও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল এই উপজেলায়।
এর আগে, সোমবার সকাল নয়টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তার আগের দিন রোববার সকাল নয়টায় রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। তারও আগের দিন শনিবার সকাল নয়টায় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যেবক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানান, টানা চার দিন ধরে এ জেলায় ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৭টা থেকেই দেখা মেলে সূর্যের। তবে সূর্যের কিরণে আলো ছড়ালেও সকাল ৮টা পর্যন্ত হাড়কাঁপানো শীত বইতে থাকে। স্থানীয়রা জানান, আবার বিকেল থেকেই হিমেল বাতাস বইতে থাকে। আর সন্ধ্যার পর থেকে শীতের মাত্রা বাড়ে। রাত বাড়তে থাকলে শীতও বাড়ে সমানতালে।
গ্রামের গৃহিণীরা জানান, সকালে কুয়াশা না থাকলেও প্রচণ্ড ঠান্ডা। রাতে বৃষ্টির ফোটার মতো শিশির ঝরার শব্দ শোনা যায়। ঘরের মেঝে থেকে শুরু করে আসবাবপত্র ও বিছানা পর্যন্ত বরফ হয়ে ওঠে। সকালে গৃহস্থালির কাজ করতে গিয়ে কনকনে ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসে। এ সময়টাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে হচ্ছে।
এদিকে বরফঝরা শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে হিম সকালেই কাজে যেতে দেখা যায় এ অঞ্চলের পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, ভ্যানচালক, দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষদের। পাথর শ্রমিকরা নদীতে বরফ জলের মধ্যেই নেমে পড়েন কাজে। কেননা এ আয়ের মধ্য দিয়ে চলে তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ।
মহানন্দা ও ডাহুক নদে পাথর তোলা ইরফান, আজগর ও মোতালেবসহ কয়েকজন পাথর-শ্রমিক জানান, নদীর পানি বরফের মতো ঠান্ডা। কিন্তু কী করবো, পাথর তোলা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। এ পাথর তুলেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তাই পেটের তাগিদেই বরফ জলে নেমে পাথর তুলতে হচ্ছে।
চা-শ্রমিক আরশেদ, সাইফুল, জামালসহ কয়েকজন জানান, এখন আগের মতো কুয়াশা নেই। কিন্তু কনকনে শীত। ভোরে প্রচণ্ড হিম-শীতের মধ্যেই চা বাগানে পাতা তুলতে এসে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। কিন্তু কী করব, জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হচ্ছে।
এদিকে শীতের কারণে বাড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন শীতজনিত রোগব্যাধি। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়তে শুরু করেছে। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর এ জেলায় শীত বেশি থাকে। এবারও শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছি। প্রকৃত গরিব, অসহায় ও শীতার্তদের মধ্যে এসব শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :