• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মুহররম ১৪৪৬

হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা


দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০৯:৫২ পিএম
হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা

দিনাজপুরে গত দুই সপ্তাহ থেকে শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। ফলে বেড়েছে শীতজনিত রোগের পাদুর্ভাব। আক্রান্তের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। যার বাস্তব চিত্রের দেখা মিলছে জেলার হাসপাতালগুলোতে। রোগীর তুলনায় শয্যা সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় হাসাপাতালের মেঝেতে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) লিখন নামে এক ২ বছর বয়সী শিশু ভর্তি হয়, দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। চার দিন থেকে সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। বুধবার রাতে অবস্থা বেগতিক দেখে তার অভিভাবক হাসপাতালে ভর্তি করান। কথা হয় তার মা রোকসানার সঙ্গে। তিনি বলেন, “হাসপাতালে সকালেই আমার বাচ্চাটাকে ভর্তি করাইছি। বাড়িতে বেশ কয়েকবার পাতলা পায়খানা করেছে। এখানে এসেও দুইবার গেল। প্রথমে আসে বেড (শয্যা) পাইনি। ঘণ্টা তিনেক পরে বেড পাইছি। শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। কবে যে সুস্থ হবে। ডাক্তার স্যালাইন দিয়েছে। এখন দেখি আল্লাহই ভরসা।”

শুধু লিখনের অভিভাবকই নয়। তারমত অনেকেই বিপাকে পড়েছেন, শীতজনিত রোগের কারণে। অধিকাংশ রোগী চার-থেকে পাঁচ দিন করে হাসপাতলে ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে হচ্ছে। এতে এক প্রকার অসুবিধায় পড়েছেন রোগীর স্বজনরা। এছাড়াও বহিঃবিভাগে প্রায় শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন শীতজনিত রোগের। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকাংশ রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে আইসোশিউশন ওয়ার্ডে ১০টি শয্যার বিপরীতে ১৩ জানুয়ারি ১৮ জন শিশুসহ মোট ২৬ জন। একইভাবে ১৪ জানুয়ারি ১৪ জন শিশুসহ মোট ২২ জন, ১৫ জানুয়ারি ১৩ জন শিশুসহ মোট ২০ জন, ১৬ জানুয়ারি ১৬ জন শিশুসহ মোট ২৪ জন, ১৭ জানুয়ারি ১৫ জন শিশুসহ মোট ১৯ জন, ১৮ জানুয়ারি ১৫ জন শিশুসহ মোট ১৯ জন এবং বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ৮ জন শিশুসহ সর্বমোট রোগী ভর্তি ছিল ১৪ জন।

এছাড়াও শিশু ওয়ার্ডে ১৩ জানুয়ারি রোগী ভর্তি ছিল ২৮ জন। একইভাবে ১৪ জানুয়ারি ২৫ জন, ১৫ জানুয়ারি ৩০ জন, ১৬ জানুয়ারি ২৬ জন, ১৭ জানুয়ারি ২৩ জন, ১৮ জানুয়ারি ২৩ জন এবং বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রোগী ভর্তি ছিল ২৮ জন।

অপরদিকে জেলা শহরের অরবিন্দ শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১২০টি শয্যার বিপরীতে ১৩ জানুয়ারি রোগী ভর্তি ছিল ১১৮ জন। এছাড়াও ১৪ জানুয়ারি ১২০ জন, ১৫ জানুয়ারি ১১২ জন, ১৬ জানুয়ারি ১১৪ জন, ১৭ জানুয়ারি ১১৮ জন, ১৮ জানুয়ারি ১১৬ জন এবং বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রোগী ভর্তি ছিল ১১৮ জন।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চিকিৎসালয়ে শয্যা সংখ্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি নেওয়া হয় না। তবে পরিস্থিতি বিপরীত হলে জরুরি সেবা দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে এই হাসপাতালে প্রায় অর্ধশতাধিক রোগী প্রতিদিনই বহিঃবিভাগে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।

অরবিন্দ শিশু হাসপাতালের চিকিৎসা নেওয়া বিথী রানী বলেন, “আমার বাচ্চাটার সর্দি বেড়ে যাওয়া। নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি করাই। ভগবান দিলে গতকাল ভর্তি করাইছি। এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। ডাক্তার বলছেন, দুইদিন পর ছুটি দিবে।”

২৫০ শর্য্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “বর্তমানে শীতের কারণে শিশুরা আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। এক্ষেত্রে শিশুর মাকে অবশ্যই সচেতন হবে। শিশুদের ১০ মিনিট অন্তর অন্তর দেখা জরুরি। বাচ্চা যদি প্রসাব করে, আর সেই স্থলে যদি বাচ্চা ১০ মিনিটের ওপর থাকে। তবে শিশুর ঠান্ডা লেগে অসুখে পড়তে পারে। অনেকেই আছে রুম হিটার ব্যবহার করেন। অবশ্যই শিশুর কাছে রুম হিটার রাখা যাবে না। আর বাচ্চাকে অবশ্যই ঢাকা দেওয়ার পূর্বে নাকের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঠান্ডায় বাচ্চাদের বাইরে না বের হতে দিয়ে ঘরেই রাখুন। বুকের দুধ নিয়মিত পান করান। বাইরের খাবার বন্ধ রাখুন।”

অরবিন্দ শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মনীন্দ্রনাথ রায় বলেন, শীতের কারণে প্রতিদিনই অরবিন্দ হাসপাতালে বহিঃবিভাগে প্রায় অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এতে করে ভর্তি রোগীর সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শীতের কারণে শিশুরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। বাচ্চাদের এসময় খেয়াল রাখতে হবে। যাতে কোনোভাবে ঠান্ডা না লাগে।
 

Link copied!