• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

গাইবান্ধায় বেড়েছে অপরাধ প্রবণতা, ছয় মাসে ১৫ খুন


গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৩, ০৯:২৮ এএম
গাইবান্ধায় বেড়েছে অপরাধ প্রবণতা, ছয় মাসে ১৫ খুন

গাইবান্ধায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ছিনতাই-হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, প্রতারণা ও নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১১১টি। এর মধ্যে ১৫টি খুনের ঘটনাও রয়েছে।  

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জুডিশিয়াল মুন্সিখানা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৫ টি, নারী-শিশু নির্যাতন ৪১টি। আর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৬ জন নারী ও শিশু। এ ছাড়া চুরি হয়েছে ২১টি এবং রয়েছে একটি ডাকাতির ঘটনাও। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে সমপরিমাণ। মাদকসহ অন্যান্য ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪১৭টি।

গত ১ জুলাই একই দিনে ৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর, বল্লমঝড় ইউনিয়ন ও গোবিন্দগঞ্জের নাকাই ইউনিয়নে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার রামচন্দ্রপুরে লুৎফা বেগম (৬০) নামের এক নারীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (১ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের জলের মোড় এলাকার নিজ বাড়ির উঠান থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।  

অপরদিকে গোবিন্দগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করছে পুলিশ। শনিবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে উপজেলার নাকাই ইউনিয়নের খুকশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল কুদ্দুস একই গ্রামের মৃত মোবারক আলীর ছেলে।

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ছুরিকাঘাতে ইউনুস মিয়া (৫০) নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৩০ জুন) গভীর রাতে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি দুপুরে গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্ম এলাকার একটি পুকুর থেকে নিখোঁজের ছয়দিন পর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক কনক প্রামাণিকের (১৯) হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে সাদুল্লাপুরের ইজিবাইক চালক রাজু মিয়ার (২৮) গলাকাটা মরদেহ সদরের উজির ধরনীবাড়ি এলাকার রেল লাইনের পাশ থেকে উদ্ধার কর হয়। ২০ মার্চ সকালে সাঘাটার সিলম্যানের পাড়ার একটি ভুট্টা ক্ষেতে থেকে রুবেল মিয়া (২৪) নামের আরেক ইজিবাইক চালকের গলায় গামছা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এছাড়া ২৮ জানুয়ারি সকালে সাদুল্লাপুরে বৃদ্ধ কৃষক সুরুত আলীর (৬৫) গলা কাটা মরদেহ নদীর ধার থেকে উদ্ধার এবং ১৮ মার্চ সদরের দুর্গাপুরে ঘাসের জমি থেকে জিসান মিয়া (১৩) নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আবার গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পলাশবাড়িতে গভীর রাতে পরকীয়া দেখে ফেলায় সাবল দিয়ে প্রতিবন্ধী স্বামী নুরুল ইসলামের (৪৫) চোখ উপড়ে ফেলেন স্ত্রী সাজেদা বেগম। অপরদিকে, ২৯ মার্চ স্বামীর পরকীয়ার জেরে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা করেন রোকসানা বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূ। ২৯ মার্চ সাঘাটায় পারিবারিক মান অভিমান থেকে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করে শিলা আক্তার (১৬) নামের তালাকপ্রাপ্ত এক কিশোরী।

অপরদিকে, ১৪ ফেব্রুয়ারি সদরের খোলাহাটিতে তিন বছরের এক শিশু ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়। এর দুইদিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঘাটায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া তিন শিশুকে যৌন নিপীড়ন করেন এক বৃদ্ধ। গত ২ মার্চ গোবিন্দগঞ্জে সাড়ে ৪ বছরের এক শিশুকন্যা ধর্ষণের শিকার হয়। একইদিন রাতে সাঘাটায় ধর্ষণের শিকার হয় ১২ বছর বয়সী এক মাদ্রাসাছাত্রী। গত ১৩ মার্চ সুন্দরগঞ্জের ছাপরহাটিতে ১৭ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিয়ের কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে মাথার চুল কেটে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ১৩ মার্চ বিকেলে সদরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশু। ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে তিন যুবক শিশুটিকে ধর্ষণ করে।

এ বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিসের (ওসিসি) গাইবান্ধার প্রোগ্রাম অফিসার রুহুল আমিন বলেন, “বেশিরভাগ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে ছেলেমেয়েদের প্রেমের সম্পর্কর সূত্র ধরে। এছাড়া যেকোনো ধরনের প্রতিশোধ স্পৃহা, দীর্ঘ সময় ধরে স্বামী বা স্ত্রী ভিনদেশে থাকায় পরকীয়া, শারীরিক অক্ষমতা এবং স্বামীর আর্থিক অক্ষমতাও ধর্ষণের উল্লেখযোগ্য কারণ। অপরদিকে, যৌতুক, দ্বিতীয় বিবাহ, ভরণপোষণ, নেশা, আত্মীয়র মধ্যে অর্থনৈতিক উঁচু-নিচুর বৈষম্য এবং পরিবারে মেনে না নেওয়ার প্রবণতার কারণে বাড়ছে নারী নির্যাতন।”

এ বিষয়ে জেলা নারীমুক্তি কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী বলেন, “অপরাধীদের সঠিক বিচার ও কঠিন শাস্তি না হওয়ার কারণেই সামাজিক অপরাধগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরাধ করার পরেও অপরাধীরা যখন গ্রেপ্তার হয় না এবং অপরাধীদের যখন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না তখন অন্যরাও অপরাধ করার সাহস পায়। ফলে দিন দিন ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

গাইবান্ধা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহবায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, “শুধু আইন করে সমাজ থেকে চুরি-ছিনতাই, প্রতারণা, খুন ও ধর্ষণ নির্মূল কিংবা কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ। একদিকে অবশ্যই আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকতে হবে, অন্যদিকে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।”

এ সব বিষয়ে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন বলেন, “পুলিশের বেসিক এবং ফান্ডামেন্টাল কাজই হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পূর্বের এবং পরের সকল কার্যক্রমেই জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিক এবং পেশাদারী প্রচেষ্টা অক্ষুণ্ণ রেখেছে।”

Link copied!