সবুজপাতা ভেদ করে অজস্র লাল শাপলা ফুটে আছে। যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই লালের অরণ্য যেন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাল-সবুজে ভরা প্রকৃতির সঙ্গে লাল শাপলা মিতালি করছে। সেইসঙ্গে দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ তৈরি করেছে এক ঐন্দ্রজালিক মুগ্ধতা।
এমনি মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের দেখা মিলবে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিকি বিলে। তবে শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে হবে সকালে। কারণ সূর্যের উপস্থিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাপলা তার আপন সৌন্দর্যকে গুটিয়ে নেয়। সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য দৃশ্যমান থাকে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল, বরোখাড়া ও আমবাড়ি গ্রামের পাশে বিকি বিল হাওরের ১০০ কিয়ারের অধিক (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) জমি নিয়ে অবস্থান। লাল শাপলার পাশাপাশি বিলটিতে সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলাও জন্মে। বছরের ছয় মাস পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। আর বছরের এই সময়েই (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) পর্যন্ত প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলা ফুল ফুটছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ এ বিলটিকে পর্যটন স্পট হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় পর্যটক ও দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বিকি বিলের কৃষক সফিকুল ইসলাম জানান, মাত্র কয়েক মাসের জন্য এখানে শাপলা ফোটে। আর বাকি ছয় মাস এখানে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন হাটে বিক্রিও করে থাকেন।
অটোরিকশাচালক জসিম মিয়া জানান, বিকি বিলে যাওয়ার সড়ক খুবই খারাপ পর্যটকসহ স্থানীয়দের নিয়ে খুব কষ্ট চলাচল করতে হয়।
বিকি বিলে আসা পর্যটক আরিফ উল্লাহ বলেন, “আমরা টাংগুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক, শিমুল বাগান বেড়াতে এসে বিকি বিলের কথা শুনেছি। যতটা শুনেছি তার চেয়েও বেশি সুন্দর এটা। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না।”
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া জানান, সুবিন্যস্ত হাওর, নদী, খালের পাশে বিকি বিল নতুন সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্র। মনোমুগ্ধকর এ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনেই পর্যটকদের আগমন ঘটছে। এখন প্রয়োজন এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, “এ বিলটি নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে আমাদের এলাকার ঐশ্বর্যে পরিণত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে বিকি বিলসহ এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
                
              
																                  
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    




































