আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। এ নির্বাচন সামনে রেখে জোরেশোরেই প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিচ্ছেন না বিএনপি। কিন্তু কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য দলটির অনেক নেতাই ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই প্রচারণায় নামেন তারা। সভা, সমাবেশ, মতবিনিময় ও ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার ব্যানার সাঁটানো, ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মী-সমর্থকদের সংগঠিত করেন প্রার্থীরা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনে এবার মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি পর্যায়ক্রমে দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা সভা অব্যাহত রেখে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে রাসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপার) প্রার্থী ঘোষণা করেছেন মহানগর আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপনকে। শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনী নামার ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী নামের একজনকে তাদের দলীয় মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে। মুরশিদ আলম একজন ইসলামী বক্তা।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরাও এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে ২ মে অনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না আসার ঘোষণায় এখন পর্যন্ত অনড় বিএনপি। এই অবস্থায় হঠাৎ মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নাম আসে দুজনের। যাদের মধ্যে একজন হলেন মহানগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ও রাজশাহী কলেজের সাবেক ভিপি সাইদ হাসান এবং অপরজন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট।
তাদের মধ্যে সুইট নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সাইদ তার কথার মধ্যে রেখেছেন রহস্য। দলের মধ্যে সুবিধাবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত সাইদ ফের কোনো নতুন সুবিধা নিতে এ নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসছেন কি না, সেটি নিয়েও নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। রাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন বিএনপি নেতা সাঈদ হাসান। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ভাই। তবে নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণা তার দেখা মেলেনি।
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, “দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শুরু করা হয়েছে।”
১২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন বিএনপির বোয়ালিয়া থানার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন। তিনি ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। দিলদার বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেষ মুহূর্তে এসে বিষয়টি নিয়ে বেকায়দায় রয়েছি। আশা করছি দল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।”
রাসিকের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০২ সাল থেকে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন শাহ মখদুম থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি বেলাল আহমেদ। এবারও তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বেলাল বলেন, “বর্তমানে আমি এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আমার ওয়ার্ডে অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। আবার নির্বাচিত হয়ে সেগুলো শেষ করতে চাই। কাউন্সিলর পদে দলীয়ভাবে নির্বাচন হয় না। দলীয় প্রতীকেও নির্বাচনে অংশ নেন না প্রার্থীরা। তাই নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই।”
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনু বলেন, “নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। সুতরাং আসন্ন রাসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্নই আসে না।”
বিএনপি নেতাকর্মীদের কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না। যদি কেউ নির্বাচনে অংশ নেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, “আমরা সংসদ নির্বাচনের বাইরে কোনো নির্বাচন নিয়ে এখন ভাবছি না। এ সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। আগামী সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ার ঘোষণা আসার পরেই আমরা অন্য নির্বাচন নিয়ে ভাবব। আমি বা আমাদের সংগঠনের কোনো প্রার্থীও রাজশাহী সিটি নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। কেউ মাঠেও নামেনি।”
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, “গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি জয়ী হওয়ার পরে রাজশাহী নগরীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এখনো তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলমান। রাজশাহীর উন্নয়নে আরও চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ফের নির্বাচিত হলে ওই প্রকল্পগুলোর জন্যও বরাদ্দ আনব। সেটি হলে রাজশাহী নগরী আরও নতুন রূপ লাভ করবে। আমি আশা করছি সে সুযোগ রাজশাহীবাসী আমাকে দেবেন।”
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, “রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য পুত্র খায়রুজ্জামান লিটনের কোনো বিকল্প নেই। নগরবাসীও এ বিষয়ে একমত। জনপ্রত্যাশার কথা চিন্তা করেই দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিটনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। সব নেতাকর্মী বিভেদ ভুলে তার পক্ষে কাজ শুরু করেছেন। আশা করছি, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় লিটন আবারও মেয়র নির্বাচিত হবেন।”
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী হতে ২৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আর কাউন্সিলর পদের জন্য মনোনয়ন ফরম তুলেছেন ৫৮ জন। শনিবার পর্যন্ত মেয়র পদের কোনো প্রার্থী মনোনয়ন ফরম তোলেননি।
রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহীতে এবার ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন ভোটার ভোট দেবেন। এর মধ্যে নতুন ভোটার ৩০ হাজার ১৫৭ জন। গত বছর ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার। এবার পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ জন এবং নারী ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ জন।
এবার ১৫২টি ভোট কেন্দ্রের ১১৭৩টি রুমে ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি শুরু করেছে। সম্ভাব্য ২১ মে মনোনয়ন দেওয়া শুরু হবে। ২৩ মে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময়। এ ছাড়া ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর প্রকাশ্যে উৎসবমুখর প্রচারণায় নামবেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা।
রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অফিসার আবুল হোসেন জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তারা আন্তরিক। তবে কোনো দল যদি নির্বাচনে না আসে সেটা তাদের ব্যাপার। তারা নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন করবেন।





































