কক্সবাজারের সাচী চৌধুরী জামে মসজিদ নিয়ে রহস্যের যেন শেষ নেই। এটি প্রতিষ্ঠা করেন সাচী চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। তবে কবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তা জানা যায় না। স্থানীয়দের বিশ্বাস, রাতে এ মসজিদে নামাজ পড়েন জিনেরা। রাত যত গভীর হয়, জিনেদের আনাগোনাও ততো বাড়ে।
কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্পসংলগ্ন সড়কের পূর্ব পাশে মসজিদটির অবস্থান। কক্সবাজার বাস টার্মিনালের উত্তরে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় ধানক্ষেতের মাঝখানে গম্বুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। মসজিদটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। অনেকেই বলেন সাচী মসজিদ। আবার অনেকের কাছে মুঘল আমলের মসজিদ, গায়েবি মসজিদ ও পোটকা মসজিদ। কিন্তু মসজিদ আসলেই কোন আমলে বা কে তৈরি করেছিল, তার সঠিক তথ্য কেউ জানেন না।
এই মসজিদে মুসলিম সম্প্রদায় ছাড়াও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক আসেন। মনের আশা পূরণ করতে বিভিন্ন মানত করেন।
মসজিদটি আয়তনে খুব ছোট। এর উত্তর পাশে রয়েছে একটি বিশাল দিঘি। মসজিদটির ভেতরে উত্তর-দক্ষিণ লম্বা ২৩ ফুট, পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা ১৪ ফুট। মসজিদের বাইরে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ৩৪ ফুট আর পূর্ব-পশ্চিমে ২৬ ফুট। মসজিদের সামনে তথা পূর্ব দিকে পাঁচ ফুট বা ছয় ফুটের একটি বারান্দা। তার সামনে খোলা সাহান বা উঠান।

মসজিদের মূল পিলার বা স্তম্ভ চারটি। এর একটিমাত্র দরজা। দরজার উচ্চতা পাঁচ ফুট। জানালা রয়েছে দুটি। জানালার উচ্চতা সাড়ে চার ফুট, প্রস্থ তিন ফুটের মতো। বর্তমানে মসজিদের ফ্লোর পাঁচ থেকে ছয় ফুট ভরাট হয়ে গেছে। মসজিদের ছাদের ওপর রয়েছে পাশাপাশি তিনটি গম্বুজ। মসজিদের ফ্লোরে বসানো হয়েছে টাইলস। ফলে কত নিচে মূল ফ্লোর রয়েছে তা বলা মুশকিল।
চট্টগ্রাম বিভাগের তথ্য সেবায় বলা হয়েছে,১৬০০-১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে শাহ সুজার আমলে একটি মসজিদ তৈরি হয়েছিল। এটি চৌধুরীপাড়া মসজিদ বা আজগবি মসজিদ নামেও পরিচিত।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মাস্টার গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আসলে মসজিদ কে তৈরি করেছিল, এর সঠিক তথ্য বা ইতিহাস কেউ জানে না। এমনকি কত বছর আগে নির্মিত, তা-ও জানা নেই। অনেকেই বলেন এই মসজিদের বয়স সর্বনিম্ন ৪০০ বছর অথবা ৬০০ বছর হবে। মানুষের বিশ্বাস, এই মসজিদ জিনেরা তৈরি করে গেছেন।
কক্সবাজারের ইতিহাস নামের একটি বইয়ের তথ্য অনুসারে, সাচী চৌধুরী জামে মসজিদটির নির্মাণশৈলী মুঘল আমলের আদলে হলেও মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত হয়নি। সাচী চৌধুরীর আদি নিবাস চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। তিনি কীভাবে কখন কী উদ্দেশ্য কক্সবাজার এসেছিলেন, তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, মূল মসজিদের পূর্বে সেখানে বারান্দা ছিল, বর্তমানে সেখানে নতুন করে মসজিদ বাড়ানো হয়েছে। প্রায় সাত কাতার মতো বারান্দার জায়গাটি এখন দ্বিতল করা হয়েছে নামাজের জন্য। এছাড়া মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে ফ্লোর করা খোলা জায়গা। যেখানে প্রায় ১০০ জন মতো নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদের দক্ষিণ পূর্ব পাশের বিরাট এলাকাজুড়ে কবরস্থান। উত্তরে বিশাল দীঘি। সব মিলিয়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে প্রশান্তি লাভ করেন।
মসজিদের নির্মাণশৈলী ও স্থাপত্য সৌন্দর্য সবার নজর কাড়ে। মসজিদের দেওয়াল প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া। কোথায়ও লোহা ব্যবহার করা হয়নি। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি মসজিদের দেয়াল ও গম্বুজ। মসজিদটির ওপর রয়েছে একটি বিশালাকার গম্বুজ।
স্থানীয় মুসল্লি নুরুল হুদা বলেন, “আমার বাবা মৌলানা আবুল হোছাইন এ মসজিদে ইমামতি করেছেন। তার কাছ থেকে শোনা কথা, জিনেরা এ মসজিদে বেশি সময় ধরে এবাদত বন্দেগি করতেন। তাই মুসল্লিরা গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করতেন না। অনেক সময় মাগরিব ও ইশা নামাজ একসঙ্গে পড়তে হতো।”
মসজিদের খতিব আমান উল্লাহ বলেন, “একসময় দিনের বেলাতে ভয় পেত মুসল্লিরা। অন্য ধর্মের লোকজনও প্রতিদিন নানা মনোবাসনা নিয়ে এই অলৌকিক মসজিদে আসেন।”
 
                
              
 
																                   
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    





































