চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইলে দেশি ও উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের পর্যাপ্ত সহায়তা ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সরিষার আবাদ কৃষকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৮ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এবার ৭০ হাজার মেট্রিক টন সরিষার উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
গত বছর কৃষকরা সরিষার ভালো দাম পেয়েছিলেন। এ বছরও অধিক লাভের আশায় সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি নিজস্ব উদ্যোগেও অনেক কৃষক সরিষার আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে সরিষার গাছে ফুল ফুটেছে। দিগন্তজুড়ে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। কৃষকরা জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া সরিষা চাষের অনুকূলে আছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে কৃষকরা এবারও সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন। সরিষা উত্তোলনের পর একই জমিতে কৃষকরা বোরো ধানের আবাদ করবেন। এতে এক মৌসুমে একই জমিতে দুটি ফসল পাবেন তারা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, সরকারি নির্দেশনায় জেলায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় তালিকাভুক্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে সরিষার বীজ ও সার। সরিষার ফলন যাতে ভালো হয়, সে লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে রয়েছেন। ফসলের মাঠে সরেজমিনে গিয়ে তারা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
জেলার দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের আগদেউলী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমি ৫০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। সরিষাক্ষেতে অনেক ফুল এসেছে। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তা হলে ফলন ভালো হবে। গত বছরের মতো দাম থাকলে লাভবানও অনেক হবো।”
জেলার বাসাইল উপজেলার বালিয়া গ্রামের কৃষক হাফেজ আলী বলেন, “আগে একটি জমিতে শুধু ধান আবাদ করতাম। ধান আবাদ শেষে জমি পতিত থাকতো। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় ধান আবাদের পাশাপাশি মাঝখানের সময়টা সরিষা চাষ হচ্ছে। সাড়ে চার বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছি।”
জেলার ধনবাড়ী উপজেলার দরিচন্দ্রবাড়ীর কৃষক আরিফুর রহমান বলেন, “সরিষায় ভালো ফলন আশা করছি। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো রয়েছে, পোকামাকড় ও রোগবালাই আক্রমণ করেনি। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ১১ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা আবাদ করেছি। কোনো ধরনের ক্ষতি না হলে লাভবান হতে পারব।”
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, “টাঙ্গাইল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরিষা উৎপাদনকারী জেলা। এ বছর আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেশি করেছি। এবার আমরা জেলা থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদনের আশা করছি। দেশের তেলের যে ঘাটতি তার বড় অংশ টাঙ্গাইল থেকে কিছুটা পূরণ করা সম্ভব হবে। আমরা যে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি করছি এ জন্য আমাদের দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে। একটি হলো সরিষার আবাদের এরিয়া বৃদ্ধি এবং অন্যটি হলো স্থানীয় জাতকে সরিয়ে নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের আবাদ বৃদ্ধি করা।”
আহসানুল বাশার আরও বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে বিনা মূল্যে সার, বীজ বিতরণসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। টাঙ্গাইলকে সরিষা উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থান থেকে কীভাবে প্রথম অবস্থানে নেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।