• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

কোয়েলের খামারে কোটিপতি নারী উদ্যোক্তা ডলি খানম


নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৪, ০১:২৭ পিএম
সফল নারী উদ্যোক্তা ডলি খানম। ছবি : প্রতিনিধি

মাত্র দুটি কোয়েল পাখি কিনে তা থেকে ডিম পেয়ে শখ জাগে কোয়েল খামার করার। এরপর একে একে ২২টি বছর পার হয়েছে এই কোয়েল পাখির খামারে। আর এই ২২ বছরে কোয়েল খামার দিয়ে দুটি অট্টালিকা বাড়ি, জমিজমাসহ কিনেছেন কোটি টাকার সম্পদ। বলছি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ডলি খানমের কথা। কঠোর পরিশ্রম আর ইচ্ছা শক্তি দিয়ে শুধু মাত্র কোয়েল পাখির খামারেই ডলি খানম আজ কোটিপতি।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার পলাশের চর গ্রামের মৃত পল্লী চিকিৎসক দিদার আলমের স্ত্রী ডলি খানম। ২০০২ সালে তার বড় ছেলে হৃদয় শখের বশে দুটি কোয়েল পাখি নিয়ে আসে বাড়িতে। কিছুদিন যেতেই পাখি দুটি ডিম দিতে শুরু করে। ছেলের নিয়ে আসা দুটি কোয়েল পাখি থেকে ডিম পেয়ে খামার করার পরিকল্পনা জাগে ডলির। পরবর্তীকালে পাশের গ্রাম থেকে ৬০০ কোয়েল পাখি কিনে এনে স্বামী-স্ত্রী মিলে পরিত্যক্ত ঘরে শুরু করেন কোয়েল খামারের। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। ধীরে ধীরে জমি কিনে নিজ জমিতে বাড়াতে থাকেন খামারের আকার। একপর্যায়ে ইনকিউবেটর মেশিন কিনে শুরু করেন ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর কাজ। প্রথম দিকে বিভিন্ন হাটবাজারে ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করলেও বর্তমানে ডলি খানম সারা দেশেই তার খামার থেকে ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করছেন। এখান থেকে ডিম ও বাচ্চা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার খামারি স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানের এই খামার থেকে প্রায় ১১ হাজার খামারিকে ডিম ও বাচ্চা সরবরাহ করা হচ্ছে। তাছাড়া খামারে কাজ করে অনেকে দূর করেছেন বেকারত্ব।

ডলি খানম বলেন, “৬০০ পাখি দিয়ে শুরু করা আমার এই খামারে আজ প্রায় ৫০ হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। যা থেকে দৈনিক ১৫-২০ হাজার ডিম বিক্রি করতে পারি। তাছাড়া ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য রয়েছে ইনকিউবেটর মেশিন। যা থেকে প্রতি মাসে এক লাখ বাচ্চা সংগ্রহ করা হচ্ছে।”

ডলি খানমের ছেলে মেহেদী হাসান হৃদয় বলেন, “ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি পাখিদের পেছনে মা খুবই পরিশ্রম করে আসছেন। সন্তানের মতো লালনপালন করে বড় করে তুলছেন পাখিদের। আমরা দুই ভাই। আমার লেখাপড়ার খরচ, ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ মোটকথা আমাদের সবই আসে এই খামারের আয় থেকে। গত ছয় বছর আগে বাবা মারা গেলে পুরো খামারটি পরিচালনায় আমি মাকে সাহায্য করে আসছি।”

পাখি বেপারি আলম মিয়া বলেন, “ডলি ভাবীর এই পাখির খামার থেকে পাখি নিয়ে আমি ১০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি। খামারটিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক বেপারিরা এসে কোয়েল পাখি ও বাচ্চা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এসব পাখি বিক্রি করে আমরা সবাই লাভবান হচ্ছি।”

খামারে কাজ করা এক যুবক বলেন, “এই খামারে আমি অনেকদিন ধরে কাজ করছি। এখান থেকেই আমার সংসার চলে। ভালোই আছি।”

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক সেলিনা আক্তার বলেন, “যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চায়, তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়োজনে আমরা তাদের অর্থ দিয়েও সহযোগিতা করে থাকি। বেকারত্ব দূরীকরণে ডলি খানমের মতো নারী উদ্যোক্তারা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।”

 

Link copied!