• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ভালো নেই কাঁসাশিল্পের কারিগররা


জামালপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩, ১০:২৬ এএম
ভালো নেই কাঁসাশিল্পের কারিগররা

আধুনিক ডিজাইন ও সস্তার মেলামাইন, প্লাস্টিক, কাচ ও স্টিলের সামগ্রীর দাপটে কাঁসাশিল্পের বাজার আজ মন্দা। কাঁচামালের অভাব তো আছেই। প্রাচীন এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারিভাবে সহযোগিতাও করা হয়েছে। এরপরও বর্তমান বাজারের সঙ্গে তাল সামলাতে না পরে অনেকেই পেশা পরিবর্তনও করেছেন। তবে মায়ার টানে আজও আঁকড়ে ধরে আছে জামালপুরের কয়েকটি পরিবার।

প্রাচীনকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা কাঁসার তৈরি বিভিন্ন নজরকাড়া ডিজাইনের জিনিসপত্র কিনতে ভিড় জমাত জেলার ইসলামপুরে কাঁসা পল্লিতে। কারিগররা দিনরাত কাজ করেও কাঁসাসামগ্রী সরবরাহ করতে হিমশিম খেতেন। কালের বিবর্তনে কাঁসাপল্লিতে আজ আর সেই ভিড় নেই।

বাঙালির গৃহস্থালি ও সংস্কৃতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তামা, কাঁসা ও পিতলের বাসনপত্র। এ বাসন দীর্ঘস্থায়ী ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার ফলে চাহিদাও ছিল সবার মাঝে। এ শিল্পের অন্যান্য পণ্যের মধ্যে ছিল পূজারঘট, ঘণ্টা, তাম্রকুণ্ড, জাহাজের ঘণ্টা, গামলা, জলের কাঁটা, প্রদীপ গাছা, পিতলের মূর্তি, সংগীতের যন্ত্রপাতি, সন্দেশ পেয়ালা, বেলিবগি, টেডিগ্লাস, রাজভোগ, রাধাকান্তী, হাতকাটা, চাঁদরেঘটি, গিনি গ্লাস, বেলেশ্বরী, কাস্তেশ্বরী, রাজভোগী, রাধাকান্তি, বংগী, বেতমুড়ি, চায়নিজ, মালা, দরাজ, রাজেশ্বরী, রত্নবিলাস, ঘুটা ও কলতুলা নামের থালা ও গ্লাস।

জামালপুর শহরের ব্যবসায়ী গৌঢ় চন্দ্র জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ শিল্পের সঙ্গে বেশি জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। পাকিস্তানি বাহিনী কাঁসাশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর ক্ষুদ্র অংশ দেশে ফিরে আসে। নানা প্রেক্ষাপটে কাঁসা কর্মকারের সংখ্যা কমতে থাকে। এরপর নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর ধরন বদলে যাওয়ায় এ শিল্পে ধস নেমেছে। গত ১৫ বছরে কাঁসা-পিতলের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। কাঁচামাল ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারছে না এ শিল্পটি।

ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প কারিগর নারায়ণ কর্মকার বলেন, “আগের মতো অর্ডার নেই। তাই প্রায়ই হাতে কাজ থাকে না। পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে দিন কাটালেও পৈতৃক পেশার মায়ায় ছাড়তে পারছি না। অনেকেই টিকতে না পেরে নানা পেশায় চলে গেছে। পৈতৃক পেশা আঁকড়ে ধরে থাকা প্রায় ২০-২৫টি পরিবার আজও কাঁসাশিল্পের সঙ্গে জড়িত।”

কাঁসাশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক অংকন কর্মকার জানান, কাঁসার নানা উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তবে ক্রেতারা উচ্চমূল্যে খরিদ করতে চায় না। তাই বর্তমানে এ শিল্পের চরম দুর্দিন চলছে। অনেকেই বাঁচার তাগিদে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পেলে ডিজিটালাইজ পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে এ শিল্পটিকে আরও উন্নত করা যাবে। সেই সঙ্গে শিল্পটির হারানো ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর হাসান রুমান জানান, ঐহিত্যবাহী কাঁসাশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাঁসাশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিজনকে ১৮ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।

Link copied!