লিচুর জন্য বিখ্যাত উত্তরের জেলা দিনাজপুর। চলতি বছর জেলায় লিচুর ফলন ভালো হলেও তীব্র তাপপ্রবাহে অনেক বাগানের লিচুই ঝলসে গেছে। এসব ঝলসে যাওয়া লিচু নিয়ে বাগান মালিকরা যেমন বিপাকে পড়েছেন, তেমনি বিপাকে পড়েছেন বিক্রেতারাও।
দশ হাজার বোম্বাই জাতের লিচু বিক্রি করতে এসেছেন বিরল উপজেলার বাসিন্দা বাসিরুল ইসলাম। ভ্যানের মধ্যে পাতা দিয়ে থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন লিচু। একপাশে পাতা দিয়ে ঢেকে অন্য পাশে খোলা রেখেছেন। এভাবে রাখলে নাকি পাইকারদের আকর্ষণ বাড়ে। কিন্তু আকর্ষণ তো দূরের কথা। কেউ ফিরেও দেখছেন না লিচুর দিকে। কারণ তার অধিকাংশ লিচুই ঝলসে গেছে।
বাসিরুল ইসলাম বলেন, “লিচু নিয়ে এবার ভীষণ বিপাকে পড়েছি। যে রোদ আর গরম। সব লিচু জ্বলে যাচ্ছে। দাম কম বলতেছে। মাঠে মারা গেলাম এবার। এ বছর আর লাভ করতে পারলাম না।”
দিনাজপুর নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বর্তমানে মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা এবং চায়না থ্রি জাতের লিচুর আমদানি হচ্ছে। এর মধ্যে মাদ্রাজি জাতের লিচু প্রায় শেষে হয়ে এসেছে। আর বোম্বাই জাতের লিচু আমদানি হতে শুরু করেছে। অপরদিকে ঝলসে যাওয়ার লিচুর মধ্যে অধিকাংশই বোম্বাই জাতের।
এ বছর মাদ্রাজি জাতের ঝলসে যাওয়া লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে। আর ভালো মানের মাদ্রাজির লিচুর দাম ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা। একইভাবে বেদানা ঝলসানো লিচু ২ হাজার থেকে ৩ হাজার এবং ভালো মানের ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা, চায়না থ্রি ঝলসানো ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ এবং ভালো মানের ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। আর এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন।
মাসিমপুর থেকে আসা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “বোম্বাই জাতের লিচু বাজারে নিয়ে আসছি। এক হাজার টাকা দাম বলতেছে। জ্বলে যাওয়ার কারণে লিচুর দাম বলে না। এই লিচু যদি জ্বলে না গেলে ৩ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। আকাশের অবস্থা খারাপ। জ্বলা লিচুর দাম কেউ বলে না।”
তরিকুল আলম নামের এক কৃষক বলেন, “আমার এবার লাভ হবে না। এবার যে হারে খরচ করছি। তার টাকাও উঠবে না। ৪৩টা লিচুর গাছ আছে। এই গাছগুলোতে আমার খরচ প্রায় ৬০ হাজার টাকা। সব লিচু জ্বলে শেষ হয়ে গেছে আমার।”
জেলার ফল আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি রস্তম আলী বলেন, “বাজারে এখন যেসব লিচু আমদানি হচ্ছে তার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ লিচুই জ্বলে যাওয়া। অতিরিক্ত রোদ আর তাপমাত্রার কারণে এইসব লিচু জ্বলে যাচ্ছে। পশ্চিমের হাওয়া এসব লিচু সহ্য করতে পারে না। তাই লিচু জ্বলে যাচ্ছে। এই আবহাওয়ায় লিচুর দাম পাবে না কৃষক। কৃষকরা এবারে লোকসানের মুখে পড়বে।”
এ বিষয়ে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মাহবুবর রশিদ বলেন, “তীব্র দাবদাহের প্রভাবে লিচু ঝলসে যাচ্ছে। কৃষকদের আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। লিচুর বর্তমান অবস্থায় কৃষকদের পরিকল্পিত সেচ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে এ সময় সালফার জাতীয় কোনো প্রকার গাছে স্প্রে করা যাবে না।”