• ঢাকা
  • সোমবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছটফট করছিল বন্ধু, বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল দুজনেরই


গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম
ছটফট করছিল বন্ধু, বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল দুজনেরই

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকে যাওয়ার পথে বিআরটিসির দোতলা বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইইউটির) ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৩ শিক্ষার্থী।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে উপজেলার উদয়খালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিন শিক্ষার্থী হলেন- মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪), মুবতাসিন রহমান মাহিন (২২) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২)

জানা গেছে, শনিবার সকালে গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বিআরটিসির ৬টি ডাবল ডেকার বাস ও ৩টি মাইক্রোবাসে করে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে যাচ্ছিলেন।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো আঞ্চলিক সড়ক ধরে রিসোর্টের দিকে যাওয়ার সময় উত্তর পেলাইদ গ্রামের উদয়খালী বাজারে পৌঁছালে বিআরটিসির একটি ডাবল ডেকার বাস পল্লী বিদ্যুতের তারের সঙ্গে লেগে যায়। এতে বাসটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

বাসটিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের বরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মো. মুহতাশিম মাশফি বলেন, “আমরা পিকনিক স্পটে পৌঁছে যাওয়ার ৩০ মিনিট পর দুর্ঘটনার খবর পাই। শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে পেরেছি, বাসটি হেলে যাচ্ছিল। ওই সময় পাশের বিদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে চলে আসে বাসটি। ওই সময় মুবতাছিন রহমান মাহিন দোতলায় তার বন্ধুর ব্যাগ আনতে যেতে যাচ্ছিল। এ সময় গেটের হাতলের কাছে যেতেই প্রথম বিদ্যুতায়িত হয় সে। বন্ধু ছটফট করছে দেখে নিজের সিট থেকে দৌড়ে যায় জোবায়ের আলম সাকিব। সে বন্ধুকে বাঁচাতে চেষ্টা করে। জোবায়ের আলম সাকিব নিজেও আহত হয়। পরে দুজনই মারা যায়।’

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে নিহত দুজনের দুই সহপাঠী বলেন, তারা একই বাসে ছিলেন। চোখের পলকে দুর্ঘটনাটি ঘটে গেল। এই বন্ধুদের সঙ্গে গতকাল রাত দুইটা পর্যন্ত একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন তারা। বাসে নাচানাচি করে পিকনিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এ ঘটনায় সব আনন্দ শেষ হয়ে গেছে। সেই মুহূর্ত বর্ণনা করার মতো নয়। তিন বন্ধুর শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মো. মুহতাশিম মাশফি বলেন, শিক্ষার্থীরাই বনভোজনের আয়োজন করেছিলেন।

বনভোজনের অন্য একটি বাসে ছিলেন একই বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাশফি হায়দার। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে যান তার বাবা ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শফিকুল হায়দার। বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরেকটু সতর্ক হলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো আনন্দভ্রমণে যাওয়ার আগে কর্তৃপক্ষ যেন আগে থেকেই সম্ভাব্যতা যাচাই করে নেয়। সন্তান হারানোর শোক সহ্য করার মতো নয়।

আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বার্ষিক বনভোজন ছিল। গাজীপুরের শ্রীপুরে জৈনাবাজারের একটি রিসোর্টে যাওয়ার পথে উদয়খালী এলাকায় দ্বিতল একটি বাস বিদ্যুতায়িত হয়। রিসোর্ট থেকে আধা কিলোমিটার দূরে এ ঘটনা ঘটে। বাসের দরজার দিকে থাকা তিনজন বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। আহত হন তিনজন। তাদের মধ্যে দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন খান বলেন, আহত দুই শিক্ষার্থীকে বেলা আড়াইটার দিকে রেফার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে আহ্ছানিয়া মিশন হাসপাতালের চুক্তি থাকায় তারা সেখানে নিয়ে গেছেন।

Link copied!