• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

‘মামুনুল হকের সঙ্গে ঝর্ণার বৈধ বিয়ে হয়েছিল’


নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩, ০৭:০০ পিএম
‘মামুনুল হকের সঙ্গে ঝর্ণার বৈধ বিয়ে হয়েছিল’

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় করা ধর্ষণ মামলার আসামি হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের সঙ্গে বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণার বিয়ে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন।

সোমবার (২৬ জুন) দুপুরে শহরের নতুন কোর্ট এলাকায় ‘জান্নাত আরা ঝর্ণার ছেলে আব্দুর রহমানের’ সাক্ষ্যের বরাত দিয়ে মামুনুল হকের আইনজীবী এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন। এ সময় তিনি আব্দুর রহমানের দেওয়া সাক্ষ্যের সার্টিফাই কপি সাংবাদিকদের দেখান।

অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক নয়ন বলেন, গত ৬ জুন আদালতে জান্নাত আরা ঝর্ণার ছেলে আব্দুর রহমান বলেছেন, ‘আমার মা জান্নাত আরা ঝর্ণা ও আল্লামা মামুনুল হকের বিয়ে বৈধ। তারা দুজন স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে বিয়ে করেছেন।’ কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলাটি নিয়ে বরাবরই মিথ্যাচার করে আসছে।

নারী ও শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওইদিন মিডিয়াতে বলেছেন, ‘দুইজন সাক্ষী বলেছেন মামুনুল হক ঝর্ণাকে এখানে এনে ধর্ষণ করেছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো ঝর্ণার ছেলে আব্দুর রহমান কখনো বলেননি আমার মাকে ধর্ষণ করেছেন মামুনুল হক।’

মামুনুল হকের আইনজীবী আরও বলেন, “২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর মামলার বাদী যেদিন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সেদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মিডিয়ায় বলেছিলেন, ঝর্ণাকে নাকি আমরা ৪১ বার ধর্ষণ করেছে কি না জিজ্ঞাসা করেছি। আর এই ৪১ বারই নাকি ঝর্ণা হ্যাঁ উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এদিন মাত্র দুই থেকে তিনবার এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। এভাবে শুরু থেকেই রাষ্ট্রপক্ষ মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে।”

ওমর ফারুক নয়ন বলেন, “গত ৬ জুন ঝর্ণার ছেলে আব্দুর রহমান আদালতের কাছে তার নিরাপত্তা চেয়েছেন। কিন্তু আদালত থেকে বের হওয়ার পর তাকে ডিবির লোকজন নিয়ে যায়। আব্দুর রহমান সেদিন বলেছেন তাকে খুলনা থেকে পুলিশ তুলে এনে ঢাকার ফারস হোটেলে রেখেছেন। যেখানে তার মা জান্নাত আরা ঝর্ণা ও তার নানাকে আনা হয়েছিল। সরকারি টাকায় তাদের সব খরচ বহন করা হয়েছে। এ সকল কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয় জান্নাত আর ঝর্ণা মামুনুল হকের বৈধ স্ত্রী। আশা করি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।“

নিজের জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে উল্লেখ করে নয়ন বলেন, “এই মামলার আইনজীবী হিসেবে আমি নিজেকে নিরাপত্তাহীন ও ঝুঁকিতে আছি বলে আমার মতামত প্রকাশ করছি। কারণ এর আগেও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনার সময় আমাদের একজন আইনজীবীকে র্যাব সদস্যরা হত্যা করেছিলেন।”

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রকিব উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, মামুনুল হকের আইনজীবী এসব মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তার এ সকল বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

এদিকে সার্টিফাই কপিতে দেখা যায়, সেখানে মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণার ছেলে আব্দুল রহমান বলেছেন, “২০১৮ সারে আমার বাবা-মার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। তারপর আমার মা ঢাকা চলে আসেন। ঢাকায় আসার পর আসামি মামুনুল হকের সঙ্গে আমার মায়ের সম্পর্ক হয়। আমি যতটুকু জানি তাদের বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে সম্পর্ক চলতে থাকে। আসামিকে পূর্ব থেকেই চিনতাম। আমার বাবার ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। আসামি কুপরামর্শ দিয়ে আমার মাকে দিয়ে আমার বাবাকে তালাক দেওয়ায় এটা সত্য নয়।”

এর আগে ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য নেন আদালত। একই সঙ্গে ওই বছরের ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।

তার আগে ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে ঘেরাও করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।

ঘটনার পর থেকেই মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করে আসছিলেন। এ সময় পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রাখে। এরপর গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মামুনুলকে। পরে এই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন মামুনুল হক।

Link copied!