• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মুহররম ১৪৪৬

ডিসির স্বাক্ষর জাল করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় দম্পতি গ্রেপ্তার


দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩, ০৭:২৭ পিএম
ডিসির স্বাক্ষর জাল করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় দম্পতি গ্রেপ্তার

দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) স্বাক্ষর জাল করে পত্রিকায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের সঙ্গে জড়িত থাকা দুইজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। পুলিশ জানায়, ৩৮ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারের তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করা কপি দেখিয়ে তারা প্রতারণা করতেন।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানায় পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন, সহকারী পুলিশ সুপার (কাহারোল) রওশন আলী, দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম প্রমুখ।

গ্রেপ্তাররা হলেন প্রতারক চক্রের প্রধান আনিকা তাসনিম সরকার তিশা। তিনি ফুলবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহজাহান আলী সরকার পুতুর মেয়ে। অন্যজন হলেন তার স্বামী আব্দুল মান্নান। তিনি নাটোর সদর উপজেলার চাঁন মিয়ার ছেলে। তিনি একজন কারারক্ষী পদে কর্মরত ছিলেন। তিশার তৃতীয় স্বামী মান্নান। তারা দুজনেই জেলা শহরের বালুবাড়ী এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৪ জানুয়ারি দৈনিক মানবকণ্ঠের দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি সুলতান মাহমুদের কাছে আসেন তিশা। এসময় তিশা তার নাম আঞ্জুমান আরা আজমেরী এবং দিনাজপুর ডিসি অফিসের (জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) এসএ শাখায় কর্মরত রয়েছেন বলে পরিচয় দেন। ওইদিন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জনবল নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রতিনিধি সুলতান মাহামুদকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রদান করেন। পরদিন ১৫ জানুয়ারি মানবকণ্ঠ ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয়। এরপর দ্রুতই তা জেলা প্রশাসকের নজরে আসে।

বিষয়টির ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মানবকণ্ঠের প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, ডিসি অফিসের আঞ্জুমান আরা আজমেরী নামে একজন ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিজ্ঞপ্তিটি তাকে প্রদান করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় আঞ্জুমান আরা আজমেরী নামে ডিসি অফিসে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট বা কোনো কর্মকতা নেই। ভুয়া পরিচয়দানকারী তিশা প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর স্ক্যানের মাধ্যমে জাল করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে মানবকণ্ঠের সাংবাদিক বাদী হয়ে তিশাসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দায়েরের পর থেকে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা তদন্ত ও অভিযান শুরু করেন। কিন্তু প্রতারক তিশা ঢাকা, নাটোর ও ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপনে থাকতে শুরু করেন। পরে কৌশল অবলম্বন করে পুলিশ তিশা ও তার স্বামী আব্দুল মান্নাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

পুলিশ সুপার আরও জানান, তিশা ইতিমধ্যে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে যাত্রাবাড়ী থানায় প্রতারণা একটি মামলায় তিশা ও তার দ্বিতীয় স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তার তৃতীয় স্বামী আব্দুল মান্নান কারারক্ষী পদে চাকরিরত ছিলেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। স্ত্রী তিশার সঙ্গে প্রতারণার কাজে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন তিনি। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর স্ক্যান করে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে ১৮ জনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। তিশা ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের সময় ৪০ হাজার টাকা, ছয়টি মোবাইল, দুটি পাসপোর্ট, নিয়োগপত্রের প্রজ্ঞাপনসহ নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়োগপত্র আদেশের বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।

গত ১৫ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সংস্থাপন শাখা অধীনে ৫০ জন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিটি জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকীর স্বাক্ষর দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এর পরপরই বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসকের। পরে জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেজে সতর্কীকরণ বার্তা শিরোনামে এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারি দপ্তরের আইডিতেও এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

Link copied!