টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভার কালিহাতী গ্রামে অবৈধভাবে গাছের গুড়ি ও কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। অথচ এই কারখানার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই। চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে ফসল। এছাড়া আশপাশের এলাকার মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জান গেছে, কালিহাতী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আলী আকবর জব্বারের পরিত্যক্ত ইটভাটা প্রাঙ্গণে হামিদপুরের প্রভাবশালী ব্যাটারি ব্যবসায়ী বাবলু সাহা এই কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কালিহাতী বনবিভাগ থেকে সিলিমপুর সড়কের পাশে পৌরসভার কালিহাতী গ্রামে অবস্থিত এ কয়লা কারখানা তৈরি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে গাছের গুড়ি দিয়ে কয়লা তৈরি করছেন। কারখানায় রয়েছে সাতটি চুল্লি। বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে কাজ করানো হচ্ছে। পরিত্যক্ত ইটভাটার পাশে তিন ফসলি জমিতে মাটি ভরাট করে এই কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, প্রায় ১৫ শতাংশ জায়গাজুড়ে কয়লা তৈরির কারখানা। চারদিকে উঠতি আমন ফসলের মাঠ ও বসতবাড়ি। ইট দিয়ে চুল্লি বানিয়ে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। চুল্লিতে গাছের গুড়ি পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। চুল্লির চারদিকে রাখা গাছের গুড়ি ও শুকনো কাঠ-লাকড়ি। মোট সাতটি চুল্লিতে আগুন জ্বলছে। এক পাশ দিয়ে ছোট কয়লা বের করা হচ্ছে। অন্য পাশে সেই কয়লা শুকানো হচ্ছে। বাকি জায়গায় বস্তায় ভর্তি করে রাখা হয়েছে কয়লা। প্রায় ৭ থেকে ১০ দিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২৫০ থেকে ৩০০ মন কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হয়ে গেলে সেগুলো বের করে ঠান্ডা করে বিক্রির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “এলাকায় অনেক গাছপালা ছিল। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানোর কারণে আমাদের শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগ দেখা দিয়েছে।”
এ বিষয়ে চুল্লি মালিক বাবলু সাহা বলেন, “কালিহাতী পৌরসভা থেকে আমাকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে কয়লা তৈরি করার জন্য। এখানে তো অবৈধ কিছু করা হয় না, যে প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। এভাবে চুলায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরিতে পরিবেশের কোনো ক্ষতিকর দিক নেই।”
কালিহাতী পৌরসভার মেয়র নুরুন্নবী সরকার বলেন, “কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির খবর আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাহেদুর রহমান বলেন, “কয়লা তৈরিতে এসব চুলায় কাঠ পুড়িয়ে যে ধোঁয়ার সৃষ্টি হচ্ছে এতে শিশুসহ বয়স্করাও ফুসফুসের সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসেইন বলেন, “কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমার কাছে ছিল না। এটা একজন আমাকে বলেছে, খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”