• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

‘বাংলাদেশে আসতে না চাইলে নির্যাতন চালায় বিএসএফ’


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ০২:৩০ পিএম
‘বাংলাদেশে আসতে না চাইলে নির্যাতন চালায় বিএসএফ’

সীমান্ত দিয়ে কেউ বাংলাদেশে আসতে না চাইলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা তাদের ওপর নির্যাতন চালায় বলে জানিয়েছেন পুশইনের শিকার এক ব্যক্তি।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকসহ পুশইন করা ব্যক্তিদের এমন স্বীকারোক্তিমূলক কয়েকটি ভিডিও জাগো নিউজের হাতে এসেছে জানিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি।

পুশইনের শিকার ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি বলেছে, সীমান্তে পুশইনের সময় হাতে বাংলাদেশি দুইশ টাকা, একটি পানির বোতল ও খাবার প্যাকেট ধরিয়ে দেয় বিএসএফ। পরে তাদের কাঁটাতারের বাইরে বের করে দেয়। কেউ আসতে না চাইলে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

আসামের মিকিরভিটা এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পুশইনের শিকার খাইরুল ইসলাম বলেন, “আসামের মিকিরভিটায় আমাদের মাটি (জমি) আছে, ঘরবাড়ি আছে। আমি সেখানকার একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার মা-বাবা সেখানকার আদি বাসিন্দা। আমার বড় ভাই ও মা সেখানের ওয়ার্ড মেম্বার।”

ওই শিক্ষক আরও বলেন, “গত ২৩ মে আমাকে এসপি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে ভারতের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সোমবার ওই ক্যাম্প থেকে ফজরের নামাজের আগে কাঁটাতার পার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সীমান্তে পাঠানোর আগে আমাদের প্রত্যেককে দুইশ টাকা, পানির বোতল ও এক প্যাকেট খাবার দেওয়া হয়। কেউ আসতে রাজি না হলে মারধর করে আসামি ভাষায় বলে ‘কিয় না যাও, যাবই লাগিবো। তোর ঘরত পৌঁছাই দিইম।”

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। মঙ্গলবার (২৭ মে) ভোরে বড়াইবাড়ি সীমান্তের ১০৬৭ নম্বর সীমানা পিলারের নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা দিয়ে ওই নাগরিকদের ঠেলে পাঠানো হয়।

পুশইন করা ১৪ ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ ও পাঁচ জন নারী রয়েছেন। তারা সবাই ভারতের আসাম জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে পুশইন করাকে কেন্দ্র করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মধ্যে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে পুশইন ঠেকাতে এলাকাবাসী ও বিজিবি কঠোর অবস্থানে সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নেয়। এছাড়াও দুপুরে বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিএসএফ রাজি হয়নি। উল্টো বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন ওড়ানো, সীমান্তে ভারি অস্ত্র তাক করিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ২০০১ সালে ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ি যুদ্ধে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমীন বলেন, “বিএসএফ জোর করে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে। আমরা এলাকাবাসী ও বিজিবি বাধা দিতে গেলে বিএসএফ আমাদের ভয় দেখাতে রাবার বুলেট ছোড়ে। এছাড়া তারা ভারত ও বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন উড়িয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে। ওই সময়ে ভারতের সীমান্তে বেশ কিছু ভারী যানবাহন দেখা যায়।”

জামালপুর-৩৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) হাসানুর রহমান বলেন, “পতাকা বৈঠকের কথা থাকলেও সেটি হয়নি। আটক ১৪ জনকে বড়াইবাড়ি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তারা মূলত কোন দেশের নাগরিক সেটা যাচাইবাছাই করে পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Link copied!