• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,
পণ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

দশ দিনেও উদ্ধার হয়নি পানগাঁও এক্সপ্রেস


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৩, ০৫:২৭ পিএম
দশ দিনেও উদ্ধার হয়নি পানগাঁও এক্সপ্রেস
সন্দ্বীপ চ্যানেলে ডুবে যাওয়া জাহাজ এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস (ফাইল ছবি)

সন্দ্বীপ চ্যানেলে ৬ জুলাই ডুবে যাওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনারবাহী জাহাজ এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস গত ১০ দিনেও উদ্ধার হয়নি। জাহাজটিতে থাকা ৯৬ টিইইউএস (টুয়েন্টি ফুট ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিট) কন্টেইনারের ৭০ কোটি টাকার পণ্য নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন আমদানিকারক ও শিপিং কোম্পানিগুলো।

পানগাঁও এক্সপ্রেসের চার্টার কোম্পানি সি গ্লোরি শিপিং কন্টেইনারসহ জাহাজটি উদ্ধারের জন্য এক্সন-জেনুইন জেভির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আজ ১৬ জুলাই থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে কন্টেইনারগুলো তুলে আনা হবে; এরপর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে জাহাজটিকে ডকে নিয়ে আসা হবে।

সি গ্লোরির ব্যবস্থাপক মাইনুল হোসেন জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থলের আবহাওয়া খারাপ থাকায় সম্পূর্ণ উদ্ধার প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শেষ হবে তা এখনো অনিশ্চিত।

ভাসানচর দ্বীপের কাছে সন্দ্বীপ চ্যানেলে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সি গ্লোরি এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের আগে জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব নাও হতে পারে।

সি গ্লোরির ব্যবস্থাপক মাইনুল হোসেন জানান, দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে আবহাওয়া খারাপ থাকায় সম্পূর্ণ উদ্ধার প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শেষ করা যাবে তা এখনো অনিশ্চিত।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, “পানগাঁও এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এতে বোঝা যাচ্ছে উদ্ধারকাজে আমাদের সক্ষমতা কতটুকু।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনালে যাওয়ার পথে ভাসানচরের কাছে ৯৬টি কন্টেইনারসহ গত ৬ জুলাই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পানগাঁও এক্সপ্রেস জাহাজটি। এই ঘটনায় তিনটি কন্টেইনার ডুবে যায়।

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারের কর্মকর্তারা জানান, আমদানিকারকরা তাদের পণ্য নিয়ে অনেক দুঃশ্চিন্তায় আছেন। তারা প্রতিনিয়ত জাহাজটির উদ্ধার সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাইছেন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমএইএ)) এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটে পরিবহন হওয়া বেশিরভাগ পণ্য কটন বা সুতার কাঁচামাল। আবার কিছু ‍আছে বাণিজ্যিক আমদানি পণ্য। প্রতি টিইইউএস কন্টেইনারে গড়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার পণ্য রয়েছে।

পানগাঁও এক্সপ্রেসের চার্টারার সি গ্লোরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন জুয়েল বলেন, “জাহাজ উদ্ধার করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। উদ্ধার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জাহাজ এবং পণ্যের বিমা করা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে পানগাঁও এক্সপ্রেস, পানগাঁও সাকসেস ও পানগাঁও ভিশন নামের তিনটি পুরোনো জাহাজ ৫০ কোটি টাকায় কিনেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কেরানীগঞ্জের ইনল্যান্ডে পণ্য পরিবহনের জন্য।

জাহাজ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকের তথ্য অনুসারে, পানগাঁও এক্সপেস এবং পানগাঁও সাকসেস ২০০২ সালে নির্মিত হলেও পানগাঁও ভিশন নির্মিত হয় ২০০১ সালে। তবে এ সময় নৌপরিপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি জাহাজ তিনটির প্রকৃত দাম ২০ কোটি টাকা দাবি করে জাহাজ কেনায় দূর্নীতির অভিয়োগ তোলে।

ওই কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি সংসদ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত নৌপরিবহন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় জাহাজ কেনার দূর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে।

সেই বৈঠকে উত্থাপিত অভিযোগে বলা হয়, সব নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ২০ কোটি টাকার জাহাজ ৫০ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে।

ওই সদস্য আরো বলেন, চীন থেকে জোড়া-তালি দেওয়া জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে এরকম পুরোনো জাহাজ কেনার কোনো ইতিহাস নেই।

এই অনিয়ম ও দূর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কমিটি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ জমা দিয়েছে বলে জানান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এম এ আব্দুল লতিফ।

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জাহাজ কেনায় দূর্নীতি প্রসঙ্গে বলেন, “এ বিষয়ে আমার জানা নেই” বিষয়টি জেনে পরবর্তীতে বলতে পারবো।”

চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জাহাজ তিনটি পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর  মাসিক ৪২ লাখ টাকা ভাড়ায় জাহাজ তিনটি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড এর কাছে হস্তান্তর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ৫ বছরের চুক্তি হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট বন্দরের কাছে হস্তান্তর করে জাহাজগুলো। ২০১৭ সালের শেষদিকে জাহাজ তিনটির চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

২০২২ সালের এপ্রিলে চতুর্থ বারের মতো ওপেন টেন্ডার অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম-পানগাঁও রুটে সর্বাধিক জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সি বিয়ারবোর্ট চাটার্ড চুক্তির আওতায় জাহাজ তিনটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। প্রতিটি জাহাজের জন্য মাসিক সাড়ে ৭ লাখ টাকা  হিসেবে ৫ বছরের জন্য চুক্তি হয়। জাহাজ তিনটি মেরামত শেষে এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস গত বছরের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম পানগাঁও রুটে চলাচল শুরু করে।

 

Link copied!