• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

৭০ বছরে বিয়ের পিঁড়িতে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক


বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৩, ০৭:২৬ পিএম
৭০ বছরে বিয়ের পিঁড়িতে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক

অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক হাওলাদার শওকাত আলীর বয়স এখন ৭০। পাঁচ ভাইবোনকে মানুষ করতে গিয়ে বিয়ে করা কয়ে ওঠেনি তার। কিন্তু অবসর জীবনে যাওয়া পর একাকীত্ব এসে ঘিরে ধরে তাকে। সেই একাকীত্ব ঘোচাতে এই বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন রামপাল সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক এই অধ্যাপক।

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার জিগিরমোল্লা গ্রামের প্রয়াত নওশের আলীর ছেলে শওকাত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন ১৮ মার্চ। কনে মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের শাহিদা আক্তার নাজু (৩৫)। পাশাপাশি নাজুর আগের ঘরে থাকা কন্যা সন্তানেরও লেখাপড়াসহ সব দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি। বিয়ের দেনমোহর ছিল ১০ লাখ টাকা।

হাওলাদার শওকত আলী ১৯৫৪ সালে রামপাল উপজেলার জিগির মোল্লা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে খুলনা বিএল কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে রামপাল ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন।

সংসারে অভাব-অনাটন থাকায় ভাই-বোনদের পড়াশোনাসহ সংসারের বেশির ভাগ দায়িত্ব পড়ে শওকত আলীর ওপর। আয় বাড়ানোর জন্য চাকরির পাশাপাশি ১৯৯৩ সালে বাড়ি ছেড়ে হুড়কা এলাকায় চিংড়ি চাষ শুরু করেন শওকত। পররে জমি কিনে হুড়কাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

ভাই-বোনদের পাশাপাশি স্থানীয় দুই শতাধিক দরিদ্র শিক্ষার্থীকে নিজ ব্যয়ে পড়াশোনা করিয়েছেন তিনি। নানা কারণে সময়মতো বিয়ে করা হয়নি তার। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান শওকত আলী।

হাওলাদার শওকত আলী বলেন, “জীবনের শুরু থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। ভাই-বোন ও এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। যে কারণে বিয়ে বা নিজের করা জমিতে একটি বাড়িও করিনি। আল্লাহ আমার আশাই পূরণ করেছেন। আমার সব ভাইবোন শিক্ষিত হয়েছে। সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।”

শওকত আলী আরও বলেন, “শেষ বয়সে এসে নিজেকে খুব একা মনে হতে থাকে। যে কারণে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। এতে পরিবারের সবাই খুবই খুশি হয়েছে।”

নববধূ শাহেদা বেগম নাজু বলেন, “সবার কাছে দোয়া চাই। বাকি জীবন যেন আমরা সুখ-শান্তিকে কাটাতে পারি।”

হাওলাদার শওকত আলীর বোন নার্গিস আক্তার ঝরনা বলেন, “ভাইয়ার দেখাশোনা করার জন্য ছেলেকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে থাকি। আমরা সব ভাই-বোন সব সময় চাইতাম, ভাইয়ার একা সংসার হোক। তিনি সুখে-শান্তিতে থাকুন। আমাদের জন্য তো অনেক করেছেন। শেষ বয়সে এসে ভাইয়া বিয়ে করেছেন। এ জন্য আমরা সবাই খুশি।”

Link copied!