জামালপুর জেলার ইসলামপুরের গুঠাইল পাটের হাট। সপ্তাহে দুইদিন এখানে বসে পাটের হাট। প্রতি হাটে এখানে ৩ কোটির টাকার পাট বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ইসলামপুরে ১০ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। তাতে উৎপাদন হয়েছিল ১৭ হাজার ৯১৮ মেট্রিক টন। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। এ থেকে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৯০ হেক্টর কম জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। গত অর্থ বৎসরের তুলনায় প্রায় ২ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন পাটের উৎপাদন কম হয়েছে। এ বছর পাটের দাম প্রতি মণ ১৮০০ থেকে ২৩০০ টাকা।
জানা গেছে, জামালপুর জেলার ইসলামপুরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গুঠাইল বাজারে প্রতি হাটে পাটে প্রায় ৩ কোটি টাকা কেনাবেচা হয়। বর্তমানে পাটের ভরা মৌসুম চলছে। গুঠাইলে প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার হাট বসে। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন পাইকাররা পাট কিনে কারখানা মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার নদীর ওপাড়ের ৬টি ইউনিয়ন ছাড়াও গাইবান্ধার ফুলছড়ি, বগুড়ার সাকাটা দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন এ হাটে।
হাটের ইজারাদার জানান, প্রতি সপ্তাহে হাটের দিন প্রায় ১৩ হাজার মণ পাট কেনাবেচা হয়ে থাকে। যার বাজার মূল্য তিন কোটি টাকার মতো।
গুঠাইল পাট হাট ইজারাদার আরিফ মাহমুদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ হাটে জামালপুর জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলার বিভিন্ন পাইকাররা আসেন পাট কিনতে। সোমবার হাটে সাড়ে ৪ হাজার মণ পাট বেচাকেনা হয়েছে। তবে শুক্রবারের বড় হাট। এ হাটে পাট বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মণ। গড় হিসাবে যার বাজার মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকার মতো।
ফুলছড়ি উপজেলার পাট চাষি ভিক্কু মিয়া বলেন, “গত বছর পাটের চাহিদা বেশ ভালো ছিল। ভাল দাম পেয়েছি। কিন্তু এ বছর পাটের চাহিদা কম, দামও কম। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, তাতে বর্তমান বাজারে পাট বিক্রি করলে খরচ তোলাই অসম্ভব হয়ে যাবে।”
মন্নিয়াচর এলাকার কৃষক সাহেব আলী বলেন, তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করছেন। পাট চাষে যে পরিশ্রম সেই তুলনা টাকা পাওয়া যায় না। চলতি বছর অনাবৃষ্টি ও পানি সংকটের কারণে পাট জাগ দেওয়ায় জন্য দূরে জলাশয়ে নিতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। অথচ এ বছর পাটের দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম।
শেরপুরের পাট ব্যবসায়ী আলম মিয়া বলেন, মিল মালিকরা এখনো পাট কিনছেন না। সে জন্যই পাটের দাম কম। মিলে পাট নেওয়া শুরু হলেই দাম বাড়বে।
ইসলামপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান আকন্দ বলেন, পাট উৎপাদনের পরপরই সব কৃষক একসঙ্গে পাট বাজারে নিয়ে গেলে পাইকাররা তাদের ইচ্ছামতো মূল্য দেন। তাই পাট চাষিরা যদি কিছুদিন ঘরে রেখে বিক্রি করেন, সে ক্ষেত্রে দাম ভালো পাওয়া যায়। বাজারে পাটের দাম কম হওয়ায় বর্তমানে পাট উৎপাদনকারী কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।