সাতক্ষীরায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে জনজীবন। দোকান-পাট, ব্যাংক,অফিস-আদালত খোলা ছিল। বাস না চললেও অন্যান্য যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এদিকে সহিংস ঘটনায় এক আওয়ামী লীগের নেতাসহ কমপক্ষে ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ না করতে বিক্ষুব্ধ জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতারা।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী জানান, সোমবার বিকেল ৫টার দিকে কয়েক শ লোক মিছিল নিয়ে নাকনা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। একপর্যায়ে তারা জাকিরের বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তিনি ছাদ থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে ১০/১২ জন গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলে নিহত হন কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের হাফেজ আনাস বিল্লাহ (১৬),কল্যাণপুর গ্রামের আদম আলী (১৬) ও কোলা গ্রামের আলম হোসেন।
একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনগণ জাকিরের বাড়িতে ঢুকে জাকির, সহযোগী শাকের আলী, জাহাঙ্গীর আলম, সজীব হোসেন ও আশিককে কুপিয়ে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ হিজলিয়া গ্রামের আলমগীর হোসেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আনার পথে মারা যান।
এদিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামের রাফেল সরদারের ছেলে আসাফুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
অপরদিকে সোমবার বিকেলে বিক্ষুব্ধ জনগণ প্রথমে শহরের পাকা পোলের কাছে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে কমপ্লেক্সসহ বেশ কয়েকটি দোকান আগুনে ভস্মীভূত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ জনগণ সুলতানপুরে সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম সৈয়দ কামাল বখত ছাকীর বাসভবন ভাঙচুর করে। এরপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা কাজী এরতেজা হাসান জজের অফিস। পরে তারা পুলিশের ট্রাফিক অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। সদর থানা সোমবার রাত থেকে পুলিশবিহীন অবস্থায় রয়েছে। রাতেই সদর থানার ওসি মোহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা পুলিশ লাইনসে চলে যান।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদের কালের চিত্র অফিস ও তার বাসভবন ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় পত্রদূত অফিসও।
ভাঙচুর করা হয়েছে কলারোয়ায় সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজ আহমেদ স্বপনের বাড়িও।
অপরদিকে রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ লোকজন সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে হামলা করে। এসময় জেলরক্ষীরা প্রধান ফটক খুলে দিলে ৫৯৪ জন আসামির সবাই বের হয়ে যান। পালানো বন্দীর অনেকেই ফিরে আসেন।
মঙ্গলবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় সমন্বয়ক ইমরান হোসেন বলেন, “আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সরকার পতনের আন্দোলনের পর এখন আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি জানাই।”