সৌদি আরবের সুস্বাদু খেজুর চাষে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ও দিঘাপতিয়া ইউনিয়নে দুই কৃষি উদ্যোক্তা। তাদের বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে সৌদি আরবের খেজুর। ইতোমধ্যে দুটি বাগানের বেশির ভাগ গাছে খেজুর ধরেছে। ফল সংগ্রহও শুরু করেছেন ওই দুই উদ্যোক্তা। তারা দুজন সফল হলে ঘটে যেতে পারে অন্য এক বিপ্লব। কমে আসতে পারে খেজুর আমদানির পরিমাণ।
এই স্বপ্নের বিপ্লবের কারিগর হলেন নাটোর শহরের কৃষি উদ্যোক্তা গোলাম নবী ও মোবারক হোসেন হোসেন নামের দুই অদম্য কৃষি উদ্যোক্তা।
নাটোর শহরের কৃষি উদ্যোক্তা গোলাম নবী জানান, ২০১৮ সালে সৌদি আরব ও ভারত থেকে প্রায় ১০ প্রজাতির ২০০ সৌদি আরবের খেজুরের চারা সংগ্রহ করেন তিনি। চারাগুলো ছাতনী ইউনিয়নের মাঝদিঘা এলাকায় প্রায় ছয় বিঘা জমিতে রোপণ শেষে পরিচর্যা করতে থাকেন। এরপর গাছের গোড়ায় নতুন চারা গজালে সেগুলোও রোপণ করেন। বর্তমানে তার বাগানে তিন বছরের অধিক বয়সী ১০০টির বেশি খেজুরগাছ রয়েছে। এ ছাড়া তিন ও আড়াই বছরের গাছও আছে। সাধারণত ৫ থেকে ৬ বছরে গাছে ফল আসার কথা থাকলেও তার আগেই গত বছর কয়েকটি গাছে খেজুর আসে। এ বছর প্রায় ৮০টি গাছে খেজুর এসেছে। একটি পরিণত গাছ ৫০-৬০ বছর ধরে ফল দেয় বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাছে থোকায় থোকায় খেজুর ঝুলছে। গোলাম নবী ছাড়াও কয়েকজন শ্রমিক বাগান পরিচর্যা করছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম নবী জানান, আজুয়া, বারহী, শিশির, সুককাইসহ ১০ প্রজাতির ৮০টি গাছে পাঁচ-ছয়টি করে থোকা এসেছে। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-২০ কেজি পর্যন্ত খেজুর পাওয়া যাবে। গত ২৫ জুলাই থেকে ফল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত এক হাজার কেজি সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতি কেজি খেজুরের বাজার দর ৩০০ টাকা।
গোলাম নবী বলেন, “গত বছর যে ১০-১৫টি গাছে খেজুর এসেছিল, সেগুলোর স্বাদ ছিল সৌদি আরবে চাষকৃত খেজুরের মতোই।”
অপর দিকে, নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর এলাকার মোবারক হোসেন জানান, তার বাবা-মা বীজ থেকে খেজুরের চারা তৈরি করেন। এক বছরের পরিচর্যায় চারাগুলো রোপণের উপযোগী হয়। পরে নিজ গ্রাম করোটায় দুই বিঘা জমিতে ৬০০ চারা রোপণ করেন তিনি।
সরেজমিন ওই বাগানে দেখা যায়, ছয়টি গাছে খেজুর এসেছে। কোনো গাছে তিনটি, কোনো গাছে দুটি আবার কোনো গাছে একটি থোকা।
এক প্রশ্নের জবাবে মোবারক হোসেন জানান, সাধারণত একেকটি পরিণত গাছে ১৫ থেকে ৩০টি পর্যন্ত থোকা আসে। প্রতি থোকায় ৪ থেকে ৮ কেজি খেজুর পাওয়া সম্ভব। এ বছর ছয়টি গাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ কেজি ফল সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, “আমরা ওই দুই বাগান পরিচর্যাসহ সব বিষয়ে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। গাছগুলোতে প্রতিবছর ফল আসে কি না, তা-ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ওই দুই বাগানের উদ্যোক্তা সফলতা পেলে অনেকে সৌদি আরবের খেজুর চাষে উদ্যোগী হবেন। এতে উদ্যোক্তাদের লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান হবে। কমে আসবে খেজুর আমদানির পরিমাণ।”