• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মুহররম ১৪৪৬

সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা


অচিন্ত্য মজুমদার, ভোলা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২, ০৮:১৬ এএম
সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

ভোলায় সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ পদ্ধতিতে ১২ মাস জমিতে সবজি আবাদ করা সম্ভব। অল্প জমি ও পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় নতুন এ পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে নিচু জমিতে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছে কৃষক। পাশাপাশি ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজির ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় উৎসাহিত হচ্ছেন আরও কৃষক।

সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের খেয়াঘাট এলাকার কৃষক নুর মোহাম্মদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, একসময় জমিতে ধান চাষ করতেন তিনি। নিচু জমি হওয়ায় প্রতিবছরই ঝড়, বন্যা এবং জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে ধান চাষ করে আশানুরূপ ফল পাচ্ছিলেন না। এরপর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে সর্জন পদ্ধতিতে সবজি আবাদ শুরু করেন। এ পদ্ধতিতে জমি থেকে মাটি কেটে উঁচু করে সারি সারি পাড় বাঁধেন। সেই পাড়ের ওপর টমেটো, কাঁচা মরিচ, লাউ, শিম, ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। পাশাপাশি ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় বিষমুক্ত সবজির উৎপাদন করছেন তিনি। এখন বছরে ১২ মাস ক্ষেতের সবজি বিক্রি করে তিনি বেশ লাভবান হচ্ছেন।

স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষক নুর মোহাম্মদের দেখাদেখি এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছেন অন্য কৃষকরাও। পাশাপাশি তার ক্ষেতে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও অনেকে।

ওই এলাকার কৃষক মো. মহসিন মিয়া জানান, তিনি একসময় কৃষিকাজ করতেন। বিভিন্ন সময় ঝড়, বন্যা এবং জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কৃষিকাজ ছেড়ে দেন। এখন কৃষক নুর মোহাম্মদের সর্জন পদ্ধতিতে সবজি আবাদ দেখে তিনি নতুন করে আবার আবাদ শুরু করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি প্রতিদিন নুর মোহাম্মদের ক্ষেতে এসে তার কাছ থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

অপর দিকে সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. নাসির জানান, তিনি কৃষক ছিলেন। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন কৃষক নুর মোহাম্মদের সবজি ক্ষেতে কাজ করছেন। এতে করে তিনি তার সংসার খরচ মিটিয়ে পরিবার নিয়ে বেশ ভালো আছেন।

শুধু নাসির নয়ন, কৃষক নুর মোহাম্মদের ক্ষেতে এমন আরও অন্তত ২০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ বছর জেলায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পাঁচ শতাধিক কৃষক সর্জন পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করছেন।

গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন জানান, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা ৩৫০ জন কৃষকে প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা, বীজ ও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সর্জন পদ্ধতিতে চাষাবাদের প্রক্রিয়া শুরু করে। পাশাপাশি ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে তারা বিষমুক্ত সবজির উৎপাদন করছে বললেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক।

ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ হোসেন জানান, এ বছর জেলার সাত উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ হয়েছে। এর মাধ্যমে জমিকে তিন ফসলে রূপান্তর করে কৃষক ১২ মাস ফসল উৎপাদন করছেন। এ জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Link copied!