সিলেটের জকিগঞ্জে নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। উপজেলার পশ্চিম আনন্দপুর গ্রামে সন্ধান পাওয়া এটি দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র। এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলনযোগ্য ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবার (৯ আগস্ট) দুপুরে বাপেক্সের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাপেক্স জানায়, বর্তমানে এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করতে পাইপলাইনের কাজ চলছে। ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে এই গ্যাস সংযুক্ত হতে পারে।
এর আগে চলতি বছরের ১৬ জুন সকালে উপজেলা শহরের অদূরে পশ্চিম আনন্দপুর গ্রামের এ অনুসন্ধান কূপে ড্রিল স্টিম টেস্ট (ডিএসটি) বা ‘সৌভাগ্য শিখা’ প্রজ্বালন করেছিল বাপেক্স। এর ফলে এ ক্ষেত্র থেকে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
ওই সময় এই ক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানালেও বাপেক্স কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এখনো এটি অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না। চূড়ান্ত কিছু জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
অবশেষে সোমবার এই ক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়ার নতুন সম্ভাবনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে। বাপেক্স কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জকিগঞ্জের পার্শ্ববর্তী গোলাপগঞ্জ উপজেলায় একাধিক গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। জকিগঞ্জেও দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। কিছুদিন আগে আশাবাদী হওয়ার মতো উপকরণ পাওয়া গিয়েছিল। সব বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটিতে উত্তোলনযোগ্য ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত আছে।
বাপেক্স কর্মকর্তারা বলছেন, কূপটির অভ্যন্তরে চাপ রয়েছে ৬ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চি) আর ফ্লোটিং চাপ রয়েছে ১৩ হাজারের অধিক। কূপটিতে মোট ৪টি স্তরে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, উত্তোলন শুরু হলে জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন ১ কোটি ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হবে। সেই হিসেবে ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে এই গ্যাস উত্তোলন করা যাবে।
এদিকে সোমবার জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ‘এনার্জি সিকিউরিটি : মডার্ন কনটেক্সট, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সিলেটের জকিগঞ্জে আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ৬৮ পিসিএফ (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) গ্যাসের সন্ধান পেয়েছি। প্রতিদিন প্রায় ১০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উত্তোলন করতে পারব। সেখান থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা যাবে, যার মূল্য প্রায় ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বাপেক্সকে ধন্যবাদ জানাই, তারা দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে পেরেছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আমি ধন্যবাদ জানাই। সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে জ্বালানি বিভাগের যে টিম এই কাজ করেছে তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।
জানা গেছে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ। আরও ৬ টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রমাণিত মজুত অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩ টিসিএফ। আর সম্ভাব্য মজুত রয়েছে আরও ৭ টিএসএফের মতো।