ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কমলেশ্বদী গ্রামে জসিম মোল্যা (২৫) নামের এক শারীরিক, মানসিক ও বাকপ্রতিবন্ধীকে চুরির অপবাদে মারধর করা হয়েছে। এ সময় প্লাস দিয়ে তার একটি দাঁত ও পায়ের একটি নখ তুলে ফেলা হয়। সংবাদ পেয়ে তাকে পুলিশ উদ্ধার করে। সে বর্তমানে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছে।
সোমবার (১ আগস্ট) বিকালে ফরিদপুর বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এ ঘটনায় আহতর বড় ভাই মো. নিজাম মোল্যা রোববার (৩১ জুলাই) বাদী হয়ে সারবানদিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাফর মোল্যাকে (৫৫) ১ নম্বর আসামি করে ১১ জনের নামে ফরিদপুর আদালতে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর সিআর ২৯৭/২২।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জসিম মোল্যা জন্মলগ্ন থেকে একজন প্রতিবন্ধী। সে প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণ করে। তার বই নম্বর ২৮৫৩। ব্যাংক হিসাব নম্বর ২০০৬৫০১০৩৯১৯০। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে সে বিভিন্ন সময় বাড়ি থেকে চলে যায়। বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি করে বাড়িতে নিয়ে আসে। গত (২৩ জুলাই) সে বাড়ি থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে (২৭ জুলাই) রাতে পথ হারিয়ে কমলেশ্বদী গ্রামের ভেতর দিয়ে আসছিল। আট দশজন তাকে ঘেরাও করে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। সে কোনো কথার জবাব দিতে না পারায় তাকে এ নির্যাতন করা হয়।
জসিমের পরিবারের সদস্যরা বলেন, তারা (নিজাম) খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আনতে গেলে তাদেরও মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। পরে জয়নগর পুলিশ ফাঁড়ির সহায়তা নিয়ে তাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
দাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, “এলাকার লোকজন জানিয়েছেন গরুসহ একজনকে ধরা হয়েছে। তখন তাদের বলেছি মারধর না করে তাকে পুলিশে দিয়ে দিতে।”
বোয়ালমারী পৌরসভার কমিশনার বিপ্লব আহমেদ বলেন, “জসিম পথ হারিয়ে আসার পথে তাকে মারধর করা হয়। পরে গরু চুরির মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে। জসিম এতোটাই প্রতিবন্ধী সে নিজে কোনো কথা বলতে পারে না এবং নিজেই ঠিক মত চলা ফেরা করতে পারে না।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালেদুর রহমান বলেন, “জসিমের একটি দাঁত ও পায়ের নখ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাকে অনেক মারধর করা হয়েছে। সে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে, তবে সে আগের চেয়ে একটু সুস্থ।”
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, “পুলিশ খবর পেয়ে জসিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাকে বেশ মারধর করা হয়েছে। ওই এলাকার লোকজন থানায় এসে বলেছিল চুরি হওয়া গরুসহ তাকে মাঠের ভেতর পাটক্ষেত থেকে ধরা হয়েছে। তবে সে যে প্রতিবন্ধী তা কেউ বুঝতে পারেনি।”