• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩০, ১২ শা'বান ১৪৪৬

কংসের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, সড়ক


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২১, ১০:৫২ পিএম
কংসের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, সড়ক

দুই যুগ ধরে কংস নদে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, ফলের বাগান, কবরস্থান, ধর্মীয় উপাসনালয়সহ শত শত স্থাপনা। ভাঙন রোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়। আশ্বাসও দেন তারা। কিন্তু কেউ আর কথা রাখেন না। এ চিত্র নেত্রকোনার বারহাট্টা ও সদরের কংস নদের।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কংস নদে বারহাট্টা উপজেলার ফকিরের বাজার, চরপাড়া, কর্ণপুর, বাড়ি তাতিয়র, সদর উপজেলার পাঁচপাই ও বাঘরুয়া গ্রামের বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। গত ২৪ বছরে ওই সব গ্রামে প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের বাড়িঘর, খেত নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফকিরের বাজারের প্রায় দুই শতাধিক দোকানপাট বাসাবাড়ি নদে ভেঙে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে গ্রামের আরো প্রায় সহস্রাধিক ঘরবাড়ি। 

গত চার বছরে এলজিইডির অধীনে ঠাকুরাকোনা-ফকিরের বাজার সড়কের চরপাড়া এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার অংশ নদে ভেঙে যায়। কিন্তু এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো স্থায়ীভাবে কোন সমাধান নিচ্ছে না। এতে করে আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা। 

রোববার (১২ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে কংস নদে ভাঙন শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কর্ণপুর ও চড়পাড়া এলাকায়। নদের তীরবর্তী কর্ণপুর ও চড়পাড়া এলাকায় পাকা সড়কটি ভেঙে যাচ্ছে। সেই সাথে গাছপালা, বাগান, ক্ষেত, কবর। ভাঙন আর স্রোতে দিশেহারা সেখানকার তীরবর্তী গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দুই যুগ ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই নদ ভাঙনের কথা শুনেছে, কিন্তু এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি। বর্ষা এলেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এসে মাপজোখ করে।

ভুক্তভোগী কর্ণপুর গ্রামের সাহেব উদ্দিন, স্বপন সরকার, সত্যেন্দ্র বর্মণ, জামাল মিয়া, সবুর মিয়া, সেলিম মিয়াসহ কয়েকজন জানান, নদটা অনেক দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে এখন তাদের বর্তমান বাড়ির কাছে চলে এসেছে। তারা তিন থেকে পাঁচ বার স্থান পরিবর্তন করে বাড়ি তৈরি করেছেন। আর এক বর্ষা গেলেই বাড়ির কাছে পানি চলে আসবে। আর্থিক সংগতি না থাকায় বাড়ি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। এখন কী করবেন তাঁরা ভেবে পাচ্ছেন না।

কর্ণপুর গ্রামের জামাল মিয়া বলেন, “আমাদের বাড়িঘরসহ অন্তত পাঁচ একর জায়গা হারিয়েছি। এখন নিঃস্ব আমরা।”

গ্রামের খোকন চন্দ্র মজুমদার বলেন, “আমরা কয়েক বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। স্থায়ী বাঁধের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। আমাদের জমি-জমা বাড়িঘর সব কিছু নদের গর্ভে চলে যাচ্ছে।”

রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেন, “কংসের ভাঙনে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক পরিবার ভিটে ছাড়া। হাজার হাজার একর জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গ্রাম রক্ষা বাঁধসহ সড়কটি রক্ষায় বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছে না।”

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, “বিষয়টি পাউবো অবগত আছে। ভাঙন রোধে ৩৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হবে।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!