‘গার দো কানে’ ট্রেনটা থামতেই ফিরে এলো চেনা স্মৃতি। ভেবেছিলাম করোনা-পরবর্তী শহরটার অনেক বদল দেখব। তা বদলেছে বৈকি!
প্রত্যাবর্তনের উৎসবটা এবার পরিবেশবান্ধব করতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। শহরের ক্যাফে আর রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশনে নিরামিষ আর মৌসুমি খাবার উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। ২০১৯-এ ৭২তম উৎসবে ২৫০ টন বর্জ্য মিলেছিল। কর্তৃপক্ষের আশা, এবার ৯৫ শতাংশ বর্জ্য কমিয়ে আনা।
রেলস্টেশন থেকে লাগেজ নিয়েই ছুটলাম ফেস্টিভ্যাল অ্যারেনায়। উদ্দেশ্য, ‘প্রেস কার্ড’ দ্রুত সংগ্রহ করা। গেল তিন বছর ফ্যাস্টিভ্যাল ভবনেই কার্ড সংগ্রহ করেছি। এবার সেখানে দেওয়া হচ্ছে করোনা প্রতিরোধক টিকা। ছুটলাম ‘গার মারিটিম’ অর্থাৎ ‘বন্দর স্টেশনে’। অ্যাক্রিডিটেশন পেপার আর একাত্তরের কার্ড দেখিয়ে কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করলাম ‘প্রেস কার্ড’। তবে পেলাম না ‘সৌজন্য ব্যাগ আর প্রয়োজনীয় স্যুভেনির’। বলা হলো, তা মিলবে ‘পালে দো ফেস্টিভ্যালে’র নিচতলায়, অর্থাৎ আগের ঠিকানায়।
-20210812133911.jpg)
তবে বিপত্তি বাধল, দুই ডোজ টিকা নিয়েও ফেস্টিভ্যাল অ্যারেনায় ঢুকতে গিয়ে। টিকা নেওয়ার সনদের ‘কিউআর কোড’ পড়তে পারল না সিকিউরিটির স্ক্যানিং মেশিন। সিকিউরিটি কর্মকতার পরামর্শ, কাছেই ‘পন্তিয়েরো এসপ্লানেদে’র করোনা পরীক্ষায় বিশেষায়িত ল্যাবে যাওয়ার। সেখানে গিয়ে জানা গেল, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সনদে কাজ হবে না। কারণ, এই টিকা তখনো ইইউ অনুমোদিত নয়। শুধু ইইউ অনুমোদিত টিকা সনদই সই। তাহলে উপায়?
উপায়, নমুনা পরীক্ষা দিয়ে নেগেটিভ সনদ দিয়ে ঢুকতে হবে উৎসব অ্যারেনায়, তা-ও একবার নমুনা পরীক্ষার মেয়াদ ৪৮ ঘণ্টা। উৎসবের অ্যাক্রিডিটেশন পাওয়া সবাই বিনা মূল্যে বিশেষায়িত ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা দিতে পারবেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা। ‘ইজি কোভিড বায়ো’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিতে হবে অ্যাপয়েনমেন্ট। নমুনা পরীক্ষার ফল মিলবে ছয় ঘণ্টার মধ্যে ‘ই-মেইলে’।
আজই নমুনা পরীক্ষা দেবে? না, কাল? এমন দোটানায় ফোন করলাম, বাংলাদেশ থেকে উৎসব কাভার করতে যাওয়া আরেক সাংবাদিক জনি হককে। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
কান থেকে ১৫ মিনিটের গাড়ি দূরত্ব, ‘মোজা ভিলাজ’। বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর শেষ এগারো বছর কেটেছে এই পর্যটন স্পটটিতে। এখানেই বসবাস করেন বাংলাদেশের রাউজানের সন্তান সেজান চৌধুরী। রয়েছে তার রেস্টুরেন্ট ‘কারি হাউস’। তার আতিথেয়তাতে এই ‘পিকাসোর গ্রামেই’ কাটবে আমার উৎসবকালীন আগামী ১২টি দিন। জনি আমার ১০ দিন আগেই নিয়েছে সেজান ভাইয়ের আতিথেয়তা।
ফোনে জনি জানাল, গাড়ি নিয়ে সেজান ভাইসহ সে কানে ফেস্টিভ্যাল অ্যারেনায় আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে। ‘গার মারিটিমে’ মিনিট ১৫ অপেক্ষার পর সেজান ভাইয়ের কালো রঙের গাড়িটা থেকে দ্রুত নেমে এলেন সেজান ভাই আর জনি। কুশল বিনিময় ছাড়াই, লাগেজটি গাড়ির পেছনে রেখে জনিসহ দ্রুত ছুটলাম, ল্যাবে। অ্যাপস ডাউনলোড করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া বারকোড দেখিয়ে ল্যাবে প্রবেশ করলাম। ল্যাব কর্মীরা বারকোড স্ক্যান করে আবারও যাচাই করল প্রয়োজনীয় তথ্যাদি। জিজ্ঞেস করল, ত্রিশ মিনিটের মধ্যে কিছু খেয়েছি কি না? ‘না’-উত্তর শুনে হাতে দিল একটি প্লাস্টিক টিউব। অনেকগুলো বুথ। সেখানে গিয়ে এই প্লাস্টিক টিউবে জমা করতে হলো ১.৫ মিলি থুতু। তারপর কর্মীদের নির্ধারিত বুথে জমা দিয়ে, হাঁফ ছাড়লাম।
-20210812133823.jpg)
ল্যাব থেকে বের হয়ে দেখি, জনি সেজানভাইসহ অপেক্ষায়। কাছে যেতেই জড়িয়ে ধরলেন সেজান ভাই। দুই বছর দুই মাস পর আবার দেখা। এর আগের বার ২০১৯-এ তার সঙ্গে পরিচয়। তখন কানেও তার রেস্টুরেন্ট ছিল। এবার কানের রেস্টুরেন্টটা আর নেই। তবে সেজান ভাইয়ের জীবনে এসেছেন সাবরীনা ভাবি আর তাদের রাজকন্যা ‘মিমোসা’। অবাক হয়ে দেখি, তারাও এসেছেন আমাকে রিসিভ করতে। এতক্ষণ গাড়িতে ছিলেন।
সবাই মিলে একটা সেলফি! এরপর গাড়ি নিয়ে আমরা ছুটলাম, সাগর ছুঁয়ে শহরের অন্যদিকে। পেটে ক্ষুধাটা জানান দেওয়ার আগেই গাড়ি থামল, কেএফসির আউটলেটে।
(চলবে)