পাকিস্তানের বোলারদের আগ্রাসী বোলিং করার জন্য যে খ্যাতি রয়েছে বিশ্বক্রিকেটে। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের বিপক্ষে পাকিস্তান বোলাররা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। লঙ্কান দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরিতে স্কোরবোর্ডে ৩৪৪ রানের সংগ্রহ পায় তারা। জবাবে পাকিস্তানের দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরিতে ৩৪৫ রানের টার্গেট ছুঁয়ে ফেলে বাবর আজমের দল। এতেই বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ১০ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।
হায়দরাবাদের রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমার জোড়া সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের সামনে লঙ্কানরা ৩৪৫ রানের বড় লক্ষ্য দাঁড় করায়। এরপর রান তাড়ায় নেমে চতুর্থ ওভারেই ব্যক্তিগত ১২ রানে ফিরেন পাকিস্তানি ওপেনার ইমাম উল হক।
নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ব্যর্থ পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও ব্যর্থ হয়েছেন। মাদুশঙ্কার বলে তুলে দিয়ে ফিরেছেন ব্যক্তিগত ১০ রানে। দ্রুত দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আব্দুল্লাহ শফিকের সঙ্গে মোহম্মদ রিজওয়ান জুটি গড়েন। দুই উইকেট পড়ে চাপে থাকা পাকিস্তানকে এই জুটি দায়িত্ব নিয়ে দলের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন। চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে নামা শফিক তুলে নেন ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির। যদিও এরপর বেশিক্ষণ আর ক্রিজে টিকে থাকতে পারেননি তিনি। ১০৩ বলে শফিক ১০টি চার ও তিন ছক্কায় ১১৩ রানের ইনিংস খেলেছেন।
অন্যদিকে, শফিকের বিদায়ে ১৭৬ রানের জুটি ভাঙলেও অন্যপ্রান্তে হাফ সেঞ্চুরি করা রিজওয়ান ঠিকিই আগলে রেখেছিলেন। এরপর সৌদ শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ৯৭ বলে রিজওয়ান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক তুলে নেন। শাকিল-রিজওয়ান জুটি থেকে পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে জড়ো হয় ৯৫ রান। ৩০ বলে ৩১ রান করা শাকিলকে ফেরান স্পিনার মহেশ থিকসানা। এরপর ইফতিখার আহমেদ যখন ক্রিজে আসেন, তখন পাকিস্তানের ৩৩ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩৭ রান। চারটি চারের বাউন্ডারিতে সেটি আরও হাতের নাগালে নিয়ে আসেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ইফতিখার অপরাজিত ছিলেন ২২* রান করে। এতেই ১০ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের বড় জয় নিয়ে ম্যাচ শেষ করে ফিরেছেন রিজওয়ান। শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে এই উইকেটকিপার ব্যাটার ১৩১* রানে অপরাজিত ছিলেন। ১২১ বলের ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন ৮টি চার ও তিন ছক্কায়। লঙ্কানদের হয়ে মাদুশঙ্কা সর্বোচ্চ দুই উইকেট শিকার করেন।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকার দল। ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনার কুশল পেরেরা দলীয় ৫ রানে ফিরে গেলে শুরুতেই ধাক্কা খায় লঙ্কানরা। হাসান আলীর বলে উইকেটের পেছনে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি লঙ্কানদের। তরুণ ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার সঙ্গে কুশল মেন্ডিস ১০২ রানের জুটি গড়েন। মেন্ডিস শুরু থেকেই ছিলেন খুনে মেজাজে, ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দিয়েছেন নিশাঙ্কা। সে ধারাবাহিকতায় মাত্র ১৭ ওভারেই দলীয় একশ পেরোয় লঙ্কানদের ইনিংস। ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূর্ণ করে শাদাব খানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আব্দুল্লাহ শফিকের হাতে তালু বন্দি হন ৫১ রানে থাকা নিশাঙ্কা।
দুই উইকেট পতনের পর মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা পাকিস্তান বোলারদের শাসন করেছেন। এদিনও এই দুই ব্যাটার নাভিশ্বাস তুলেছেন পাকিস্তানি বোলারদের। তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের বিপরীতে ভুলে যাওয়ার মতো বোলিং করেছেন শাহিন আফ্রিদি ও হারিস রউফরা। তারা লঙ্কানদের দ্রুতগতির রান তোলার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি করেছেন মেন্ডিস, সেঞ্চুরি পেয়েছেন সামারাবিক্রমাও।
হাসান আলীর বলে ইমাম-উল হকের অসাধারণ এক ক্যাচে আউট হওয়ার আগে মেন্ডিস করেছেন ১২২ রান। ৭৭ বলের ইনিংসে মেরেছেন ১৪টি চার ও ৬টি ছয়। আউট হওয়ার আগে সামারাবিক্রমার সঙ্গেও শতরানের জুটি গড়েছেন মেন্ডিস। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা দুজনে তুলেছেন ৬৯ বলে ১১১ রান। মেন্ডিস-ই ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। এই জুটিতে তার অবদান ৩৭ বলে ৭২ রান। তার পেছনে অবশ্য পাকিস্তানি ফিল্ডার ইমামের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ মাত্র ১৮ রানে থাকাকালেই তিনি মেন্ডিসের ক্যাচ হাতছাড়া করেছিলেন।
পাকিস্তানের হয়ে খরুচে বোলিং করলেও ঠিকই চার উইকেট তুলে নিয়েছেন হাসান আলী। তার বলে সামারাবিক্রমা আউট হওয়ার আগে ৮৯ বলে ১০৮ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন। তিনি মেরেছেন ১১টি চার ও দুটি ছক্কার বাউন্ডারি। শেষদিকে লঙ্কানদের সংগ্রহ আরও বাড়তে পারত। কিন্তু শেষ তিন ওভারেই তারা তিন উইকেট হারায়। পাকিস্তানের হয়ে হাসান আলী সর্বোচ্চ ৪ উইকেট এবং হারিস রউফ নেন ২ উইকেট।